বিনোদন ও শরীরচর্চা মানবজীবনের একান্ত প্রয়োজনীয় বস্তু। সুস্থ দেহ ও প্রশান্ত মন সফল জীবনের ভিত্তি। বিনোদন বা খেলাধুলাকে তাই নিষিদ্ধ করেনি ইসলাম। শরীর ও মনে প্রশান্তি আনতে, শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং জীবনের ভারসাম্য রক্ষায় ইসলাম খেলাধুলাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে তা হতে হবে নির্দিষ্ট শর্ত ও সীমারেখার ভেতর। কারণ মুমিনজীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। ক্ষণিক আনন্দের আড়ালে যেন আখেরাতের পুঁজি নষ্ট না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখা অবশ্য কর্তব্য।
ইসলামে পছন্দনীয় খেলা: ইসলাম শুধুমাত্র চিত্তবিনোদনের জন্য নয়, বরং উপকার ও শরীরচর্চার উদ্দেশ্যে কিছু খেলাকে পছন্দ করেছে। যেমন তীরন্দাজি, অশ্বারোহণ, সাঁতার শেখা বা শেখানো, স্ত্রীর সঙ্গে হালকা খেলাধুলা করা এবং দৌড় প্রতিযোগিতা।
হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘চারটি জিনিস ছাড়া আল্লাহকে স্মরণ করার সঙ্গে সম্পর্কহীন সব কিছুই অনর্থক খেলতামাশা। নিজের স্ত্রীর সঙ্গে খেলাধুলা করা, ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, লক্ষ্যভেদ শেখা এবং সাঁতার শেখা।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ৮৯৩৯) আরেক হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় খেলা হলো অশ্বচালনা ও তীরন্দাজি।’ (ইবনে আদি: ৬/১৭৬)
এছাড়া দৌড় প্রতিযোগিতাও ইসলামে পছন্দনীয়। নবী করিম (সা.) নিজেই হজরত আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন, যা বৈধ খেলাধুলার প্রতি নবীজির ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ।
খেলাধুলার শরয়ি দৃষ্টিভঙ্গি: কিছু খেলাকে ইসলাম সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছে যেমন জুয়া, পাশা, দাবা, মোরগ বা ষাঁড়ের লড়াই, কবুতরবাজি ইত্যাদি। এগুলো ছাড়া অন্যান্য খেলাধুলার বৈধতা নির্ভর করে কিছু শরয়ি নীতিমালার ওপর। যথা
১. উদ্দেশ্যহীন ও সময়নষ্টকারী খেলা বৈধ নয়। কারণ এতে জীবনের মহামূল্যবান সময় নষ্ট হয়।
২. যেসব খেলা ফরজ বা ওয়াজিব আমল থেকে উদাসীনতা সৃষ্টি করে, সেগুলো হারাম। ইমাম বুখারি (রহ.) বলেছেন, ‘যে খেলা আল্লাহর আনুগত্যে উদাসীনতা আনে, তা নাজায়েজ।’ (সহিহ বুখারি)
৩. সতর খোলা রাখা, নারী-পুরুষের অবাধ মিশ্রণ, গান-বাজনা, জুয়াবাজি প্রভৃতি হারাম বিষয় যুক্ত খেলাও নিষিদ্ধ।
৪. অতিরিক্ত সময় ব্যয়কারী খেলা, যা পড়াশোনা, কাজ বা দায়িত্বে ব্যাঘাত ঘটায়, তা অপছন্দনীয় (মাকরূহ)। মুমিনজীবনের প্রতি মুহূর্ত সময় আমানতের অন্তর্ভুক্ত, এজন্য খেলাধুলা বিনোদনের উদ্দেশ্যে বৈধ হলেও তাকে জীবনের লক্ষ্য বানানো যাবে না।
৫. তীব্র আঘাত, অঙ্গহানি বা প্রাণনাশের আশঙ্কাযুক্ত খেলা শরিয়তসম্মত নয়।
অতএব যদি কোনো খেলা এসব নিষিদ্ধ বিষয়ের বাইরে থাকে এবং তাতে দ্বীনি বা দুনিয়াবি উপকার পাওয়া যায়, তবে তা জায়েজ। ইসলাম খেলাধুলাকে নয়, বরং সীমালঙ্ঘনকে নিষিদ্ধ করেছে। তাই খেলাধুলা হোক আনন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তবে তা যেন আল্লাহর সীমা লঙ্ঘনের কারণ না হয়।
কেকে/ এমএস