২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে সোনারগাঁ উপজেলার ১০টি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে হতাশাজনক ফল করেছে সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউট স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এবারের পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির পাশের হার মাত্র ১৮.৪৯ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানটির ১১৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে কেবল ২২ জন পাস করেছে, বাকি ৯৭ জন অকৃতকার্য হয়েছেন। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ১জন। ফলে উপজেলার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় জি আর ইনস্টিটিউটের ফল সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঠদানে গাফিলতি, পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতির ঘাটতি এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের উদাসীনতার কারণে এই ফলাফল প্রত্যাশার তুলনায় অনেক নিচে নেমেছে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই পরীক্ষার্থীরা টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে ফেলে। এরপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও অধ্যক্ষ পরিবর্তন নিয়ে অস্থিরতার কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে আসেনি। টেস্ট পরীক্ষায় অনেকেই ফেল করে। আমরা ফরম পূরণে বাধা দিতে চেয়েছি, কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। এই কারণেই ফল ভালো হয়নি।”
অভিভাবক মো. সাইফুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা সন্তানদের ভালো ফলাফলের জন্য প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের ওপর ভরসা করি। কিন্তু সঠিকভাবে ক্লাস না হওয়া, দুর্বল তত্ত্বাবধান আর উদাসীন পরিবেশের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পরীক্ষার আগে কোনো বিশেষ সহায়তামূলক প্রস্তুতিও ছিল না। ফলে অনেকেই ফেল করেছে।”
স্থানীয় শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, “শিক্ষা কার্যক্রমে দ্রুত পরিবর্তন ও জবাবদিহি না আনলে আগামী বছরগুলোতেও এমন হতাশাজনক ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।”
গভনিং বডির সভাপতি তুহিন মাহমুদ গতকাল রাতের ফেসবুক পোস্টে লিখেন, সোনারগাঁ জি আর কলেজের সাম্প্রতিক ফলাফল আমাদেরকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছে। এই ফলাফল কেবল একটি ব্যর্থতা নয় এটি আমাদের দীর্ঘদিনের একাডেমিক কাঠামোর দুর্বলতা এবং দায়িত্ববোধের ঘাটতির প্রতিচ্ছবি।
আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এই ফলাফলের সময়কালীন একাডেমিক কার্যক্রম ও প্রস্তুতির সঙ্গে আমি কোনভাবেই সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি রেজিস্ট্রেশনের পর, যখন পরীক্ষা ও শিক্ষাক্রমের প্রধান অংশ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
তবুও, প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি হিসাবে আমি কোনোভাবেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছি না। ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আমি শিক্ষকবৃন্দের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছি, দীর্ঘ আলোচনায় যথাযথ কারণগুলো বিশ্লেষণ করেছি এবং তা দূরীকরণের জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
আমরা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি যে রেজাল্ট এবার হয়েছে, ভবিষ্যতে সোনারগাঁ জি আর কলেজে আর কখনো এত খারাপ ফলাফল হবে না, ইনশাআল্লাহ।
এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রশাসনিক, একাডেমিক ও নৈতিক উদ্যোগ নিয়েছি এবং চালিয়ে যাব। এবং অদূর ভবিষ্যতে যারা এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে আসবেন, তারা যেন আজ গৃহীত পদক্ষেপগুলো ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করেন এবং আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন সেই আশাই রাখি।
এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের সকল শুভানুধ্যায়ীদের আমন্ত্রণ জানাই প্রতিষ্ঠানে এসে সহযোগিতা করার জন্যে।
কেকে/বি