বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, “পলিসি অপশন দেবেন বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীরা, আর জনপ্রতিনিধিরা দেবেন পলিসি ডিসিশন—এটাই গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র।”
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য, সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষক তার আত্মা’ উল্লেখ করে ড. আব্দুল খান বলেন, “আমরা শিক্ষকদের বলি মানুষ গড়ার কারিগর। ইতিহাস সাক্ষী—যে দেশ শিক্ষায় উন্নত হতে পারেনি, ভালো শিক্ষক ও ভালো ছাত্র তৈরি করতে পারেনি, সে দেশ কখনোই এগিয়ে যেতে পারেনি।”
তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার পদ্ধতিগতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দিয়েছে। তার ভাষায়, “একটি ফ্যাসিবাদী সরকার সবসময় চায় মানুষ যেন অন্ধ, নির্বাক ও অসচেতন থাকে। তাই তারা শিক্ষাকে ধ্বংস করেছে। এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
ড. খান বলেন, “জার্মানির ইতিহাস আমাদের শেখায়—জ্ঞান, শিক্ষা ও শিক্ষক এই ত্রয়ীই জাতির মূল শক্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসের পরও তারা শিক্ষার শক্তিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো ডিগ্রি শেষের সময়সীমা ছিল না; উদ্দেশ্য ছিল যোগ্য হওয়া ও সমাজকে আলোকিত করা। সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক বিষয় ছিল—প্রত্যেক ছাত্রের লক্ষ্য ছিল শিক্ষক হওয়া। এটাই ছিল তাদের জাতীয় দর্শন।”
তিনি আরও বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ছিল আমাদের গর্ব, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। সেখানে টিউটোরিয়াল সিস্টেম, গবেষণার পরিবেশ ও শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক ছিল শিক্ষার আলোকবর্তিকা। কিন্তু আজ সেই ঐতিহ্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি।”
বিশ্বমানের শিক্ষার প্রসঙ্গ টেনে মঈন খান বলেন, “বর্তমানে বিশ্বের প্রথম ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৬০ থেকে ৭০টি। অনেকে বলেন, আমেরিকা শক্তিশালী তাদের সামরিক ক্ষমতার কারণে; কিন্তু আমি বলি, তাদের প্রকৃত শক্তি শিক্ষায়—তাদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও মেধাবী ছাত্রদের মধ্যেই আমেরিকার প্রকৃত সম্পদ।”
‘শিক্ষককে অপমান করে উন্নয়ন সম্ভব নয়’ মন্তব্য করে ড. আব্দুল খান বলেন, “আজ দেশে শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস ছোড়া হচ্ছে—এর চেয়ে কলঙ্কজনক ঘটনা আর কিছু হতে পারে না। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বলছি, এটা কেবল ব্যক্তিগত আঘাত নয়, শিক্ষার প্রতি এক ভয়াবহ অবমাননা।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “সরকার যখন শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা ঘোষণা করে, তখন সেটা আসলে শিক্ষার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকাশ করে। এই টাকায় কি আজকের বাংলাদেশে কোনো শিক্ষক বাড়ি ভাড়া নিতে পারেন?”
‘সংস্কারের নামে কেবল কমিটি, বাস্তবায়ন কোথায়?’—এই প্রশ্নও তোলেন বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, “শিক্ষা সংস্কারের নামে অসংখ্য কমিটি হয়েছে, অসংখ্য সেমিনার হয়েছে; কিন্তু বাস্তব প্রতিফলন নেই। মাঠপর্যায়ে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।”
শেষে তিনি বলেন, “জাতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে শিক্ষাকে আবার রাষ্ট্রের প্রথম অগ্রাধিকার করতে হবে। শিক্ষককে দিতে হবে সম্মান, ছাত্রকে মানসম্মত শিক্ষা, আর বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিরিয়ে দিতে হবে তার হারানো মর্যাদা।”
কেকে/এজে