‘শহরের জন্য পানি যাবে, কিন্তু গোদাগাড়ীর মানুষ আর্সেনিক খাবে এই বৈষম্য চলবে না।’- এই ঘোষণা নিয়ে পানির ন্যায্য অধিকারের দাবিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে উত্তাল হয়ে ওঠেছে জনতা।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) তীব্র জলসংকট ও বঞ্চনার প্রতিবাদে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘গোদাগাড়ী স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদ রাজশাহী’।
মানববন্ধনে প্রধান বক্তার বক্তব্য গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ও গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, ‘গোদাগাড়ী থেকে ওয়াসার ট্রান্সপ্লান্ট ট্রিটমেন্ট পাইপলাইনে শহরের জন্য পানি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অথচ এখানকার মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে। এটা ভয়াবহ অবস্থা।’
‘শহরের মানুষ যেমন মানুষ, আমরা গ্রামের মানুষরাও মানুষ। মানুষে মানুষে বৈষম্য চলবে না। গোদাগাড়ীর হিস্যা পূরণের পরই শহরের পানি সরবরাহ করা হোক। আমাদের বাদ দিয়ে এক ফোঁটা পানিও নিতে দেওয়া হবে না।’
মানববন্ধনে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের পাশাপাশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের হাতে ছিল নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে লিখা প্ল্যাকার্ড, ‘আমাদের পানি আমাদের অধিকার গোদাগাড়ীবাসীর অঙ্গীকারপানির ন্যায্য অধিকার সম্পদ ব্যবহারে স্থানীয় সিদ্ধান্তের অধিকার চাই’।
আদিবাসী নারী মুক্তা রাণী বলেন, ‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। ঠিকমতো পানি পাই না। যা পাই তাতে আর্সেনিক থাকে। অনেক টিউবওয়েলে জলই ওঠে না। অথচ তারা শহরে পানি নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগে আমাদের পানি নিশ্চিত করা হোক, তারপর শহরের কথা ভাবুক।’
গোদাগাড়ী স্বার্থ সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক মোস্তারুজ্জামান লাভলু বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে আর্সেনিক সমস্যা ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামায় চরম সংকট চলছে। সুলতানগঞ্জ থেকে লক্ষ লক্ষ লিটার পানি নিয়ে যাওয়া হবে, আর আমরা বঞ্চিত থাকব—এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
তিনি দাবি জানান, স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ভেঙে পাইপলাইন বসানোর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং গোদাগাড়ীর জন্য পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থাও করতে হবে।
এর আগে, সোমবার (১৩ অক্টোবর) পদ্মা নদী থেকে উত্তোলিত বিশুদ্ধ পানির ন্যায্য অংশ গোদাগাড়ী উপজেলার জনগণের জন্য বরাদ্দের দাবিতে পরিষদের পক্ষ থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছেও দাবিপত্রের অনুলিপি হস্তান্তর করা হয়।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা বরেন্দ্র অঞ্চলে অবস্থিত। এখানকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর নিচে নামছে। অধিকাংশ এলাকার টিউবওয়েলে আর্সেনিকের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যেই রাজশাহী ওয়াসা পদ্মা নদী থেকে পানি তুলে ট্রান্সপ্লান্ট ট্রিটমেন্ট প্রক্রিয়ায় শহরে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পে তাদের জন্য কোনো বরাদ্দ বা বিকল্প পানির ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষ কৃষিনির্ভর জীবনযাপন করেন। কৃষিকাজ, গৃহস্থালি ও পানযোগ্য পানির অভাবে তাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
তাদের একটাই দাবি আমাদের পানি আগে, শহরের পানি পরে।
কেকে/ এমএ