কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র আল্লাহু চত্বর এখন যানজটের সমার্থক নাম। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এলাকাটি পরিণত হয় যানবাহন জটের মেলায়। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাজারও পথচারী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, রোগী ও অফিসগামী মানুষকে।
মুরাদনগর-ইলিটগঞ্জ, মুরাদনগর-রামচন্দ্রপুর ও মুরাদনগর-হোমনা সড়ক সব দিক থেকেই যানবাহন এসে মিশে যায় এই এক চত্বরে। মূল সড়ক ফাঁকা থাকলেও চত্বরে পৌঁছাতেই থেমে যায় যানচলাচল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্কিং, যাত্রী তোলা-নামার স্থান না থাকা এবং অটো রিকশা, সিএনজি, ট্রাক ও পণ্যবাহী গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত চলাচলই যানজটের প্রধান কারণ।
প্রায়ই দেখা যায়, ‘গরিবের টেসলা’ খ্যাত অটো রিকশাগুলো যাত্রী তোলার জন্য রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে। অন্যদিকে ট্রাক ও মালবাহী গাড়িগুলো বাজার এলাকায় পণ্য ওঠানামার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা দখল করে রাখে। এতে কয়েক মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে আধা ঘণ্টারও বেশি।
ভুক্তভোগী যাত্রী রফিকুল ইসলাম, যিনি প্রতিদিন মুরাদনগর সদর থেকে রামচন্দ্রপুরে যান, তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে কাজের জায়গায় যেতে দেরি হয়ে যায়। আল্লাহু চত্বরে এলেই যানজটে আটকে থাকতে হয় কমপক্ষে ২০-৩০ মিনিট। পুলিশের লোক আসলে একটু চলাচল হয়, না হলে পুরোপুরি অচল হয়ে যায় রাস্তা।’
ব্যবসায়ী শফিক মিয়া বলেন, ‘আমাদের দোকানের সামনে প্রতিদিনই রিকশা আর সিএনজির লাইন লেগে থাকে। ক্রেতারা দোকানে আসতে ভয় পায়। কারণ রাস্তা পার হতে গিয়েই আটকে যায় যানজটে।’
কলেজ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পরীক্ষার দিনও সময়মতো পৌঁছাতে পারিনি। বাস থেকে নেমে হেঁটেই কলেজে যেতে হয়। আল্লাহু চত্বর এখন যেন যন্ত্রণা চত্বর হয়ে গেছে।’
পুলিশ ও প্রশাসন মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে। কিছু সময়ের জন্য যানজট কমলেও স্থায়ী সমাধান মিলছে না।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, আল্লাহু চত্বরের আশেপাশে নির্দিষ্ট পার্কিং জোন, অটো ও সিএনজির জন্য স্টপেজ নির্ধারণ এবং স্থায়ী ট্রাফিক পুলিশ বুথ স্থাপন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, বাণিজ্যিক এলাকা ও হাট-বাজারগুলোর জন্য সময়ভিত্তিক মালবাহী গাড়ি চলাচলের নিয়ম প্রণয়ন করলে সমস্যা অনেকটাই সমাধান হতে পারে।
মুরাদনগরের আল্লাহু চত্বর প্রতিদিনের প্রাণচাঞ্চল্যের প্রতীক হলেও এখন তা মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাময়িক অভিযান নয়, প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও স্থায়ী সমাধান। নইলে মুরাদনগরের এই গুরুত্বপূর্ণ চত্বর ভবিষ্যতে পুরো উপজেলার যানবাহন ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
কেকে/ এমএ