পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার রনগোপালদী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোশারেফ হোসেনের বিরুদ্ধে জেলেদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত চাল বিক্রি করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের প্রণোদনার চাল বণ্টনে এই অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরঙ্গ নদীতে ২২ দিনের মা ইলিশ নিষেধাজ্ঞার সময়ে উপজেলার রনগোপালদী ইউনিয়নে মোট ২ হাজার ২৭০ জেলের জন্য ২৫ কেজি করে চাল বুঝে নেন প্যানেল চেয়ারম্যান মো. অলিউল ইসলাম রুবেল হোসেন। রোববার (১২ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে রনগোপলদী ইউনিয়নের ২ হাজার ২৭০ জন জেলের চাল ওয়ার্ড সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যদের মধ্যে অনুপাত অনুসারে ভাগ করে দেন অলিউল ইসলাম।
অনুপাত অনুসারে মোশারেফ হোসেনকে ৩১০ নামে ২৫ কেজি করে ৫০ কেজির ১৫৫ বস্তা চাল দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠেছে- চাল বিতরণের সময় মোশারেফ হোসেন ওই চালের মধ্যে ১৪ বস্তা (২৮ নাম) চাল নিজে আত্মসাৎ করেন এবং ৯ বস্তা (১৮ নাম) চাল নামা উঠানোর জন্য খরচ বাবদ বিক্রি করেন। এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সাংবাদিক ও স্থানীয় জনগণকে টাকাসহ বিভিন্ন অফার দেন তিনি।
গুলি আউলিয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রিক্সা চালক জালালের রিক্সায় ৬ বস্তা চাল ধরা পরলে তিনি বলেন, ‘চাল মোশারেফ মেম্বার ও বারেক ফকির দিয়েছে, এই চাল বাড়ি বাড়ি দিতে বলছে। আমাকে বলছে, ডালি বাড়ি তিন বস্তা দিয়ে বাকী চাল ফকির বাড়ি রাখতে। আমি বাড়া পাবো- এ জন্য চাল রিক্সায় টানছি।’
৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বারেক মিয়া বলেন, ‘অনেকে চাল নিতে আসে না। মোশারেফ মেম্বার এই আট বস্তা চাল রেখে গেছে, বলছে রাখতে। আমি পাহারা দিচ্ছি। সে আসলে যা করার করবে। আমি লেবারি করি।’
রনগোপালদী ইউনিয়নের প্যানের চেয়ারম্যান অলিউল ইসলাম রুবেল বলেন, ‘আমি ৯ নম্বর ওয়ার্ডে চাল সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্যকে বুজিয়ে দিয়েছি এবং কেরিং খরচ বাবদ টাকা দিয়েছি। চাল বিক্রির প্রশ্ন থাকতে পারে না। চাল বিক্রির কথা তিনি স্বীকার করলে আমি নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাব।’
রনগোপালদী ইউনিয়নের আর্থিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার বিষয় আমার জানা নেই। ওয়ার্ড সদস্য মোশারেফ হোসেনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। চাল বিক্রির কথ জানা নেই। এমন ঘটনা হলে আমি নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাব।’
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিঠুন চন্দ্র হাওলাদর বলেন, ‘এ পর্যন্ত জেলেদের চাল বিতরণের কেরিং খরচ রনগোপালদী ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে কে কে নিয়েছে, তার ডকুমেন্ট সংরক্ষিত আছে। আর কেরিং খরচের টাকা আমাদের তোলার কোন কারণ নেই। সে যা বলছে মনগড়া। আমি এ বিষয়ে নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করবো।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘চাল বিতরণের সময় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। আমি ৬ বস্তা (১২ নামের) চাল বিক্রি করছি। কেরিং খরচ আমাদের দেয় না। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান ভাগ করে খায়। কেরিং খরচ কি আমি দিবো? তাই চাল বিক্রি করছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরতিজা হাসান বলেন, ‘রনগোপালদী ইউনিয়নে জেলেদের চাল বিতরণ করা হয়েছে। ওয়ার্ড সদস্য কর্তৃক চাল বিক্রির ঘটনা আপনার মাধ্যমে জানলাম। জেলেদের চাল মেরে ধান্দা করবে, তাকে কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবেনা। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনে নিজের খেয়াল খুশিমতো চাল বিতরণে অনিয়ম করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কেকে/ এমএ