ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল ও স্বয়ংক্রিয় করতে ভূমি মন্ত্রণালয় গ্রহণ করে ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প (এলএমএপি)। নাগরিকদের জন্য ১৭ ধরনের সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পটি চালু হলেও ঠিকাদার নির্বাচনে উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ।
প্রকল্পের পরিচালক যুগ্মসচিব মো. পারভেজ হাসান স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে সাত প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করে প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে— এসইবিপিও অ্যান্ড ট্যাপওয়্যার-জেভি, সিনটেক সল্যুশনস লিমিটেড-এঅ্যান্ডএ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (জেভি) এবং টেকনোভিসতা লিমিটেড। এ তিন প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) দাখিলে আশ্রয় নিয়েছে অনিয়মের, তাদের সংক্ষিপ্ত বাছাইয়ের পেছনেও রয়েছে স্বচ্ছতার অভাব।
অভিযোগ রয়েছে, ট্যাপওয়্যার সল্যুশনস ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এটুআইয়ের সহায়তায় দরপত্রের শর্ত নিজেদের সুবিধামতো সাজিয়ে কাজ পেয়েছে, যার অনেক সেবাই বর্তমানে অকার্যকর। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বর্তমান প্রকল্পের সিস্টেম অ্যানালিস্ট (ভারপ্রাপ্ত) মো. সাদ্দাম হোসেন মজুমদারের, যিনি এটুআইয়ের সাবেক ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট ছিলেন। অভিযোগ আছে, তিনি এবং প্রকল্পের প্রোগ্রামার শেখ সবুজ হাসান মিলে ট্যাপওয়্যারকে সুবিধা দিয়ে আসছেন।
এছাড়া, সিনটেক সল্যুশনস লিমিটেড-এঅ্যান্ডএ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (জেভি) নামের কনসোর্টিয়ামেও অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এঅ্যান্ডএ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ২০২১ সালে যাত্রা শুরু করা একটি ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান, যার কোনো কার্যকর ওয়েবসাইট নেই এবং বেসিসের সদস্যও নয়।
অন্যদিকে, সিনটেক সল্যুশনস পূর্বে রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে বহু কাজ পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতিষ্ঠান টেকনোভিসতা লিমিটেডকেও এ তালিকায় রাখা হয়েছে, যাদের অতীত রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে বহু কাজ পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে এবং অধিকাংশ কাজগুলির অনেক সেবাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সমালোচকরা বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাব ও পুরনো যোগসাজশের কারণে এ প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা পাচ্ছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সফটওয়্যারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নাগরিক চাহিদা-নির্ভর। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়মের ফলে দেশের প্রযুক্তি খাত যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের জনগণ। তবে, বর্তমানে একই প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম-বেনামে সুবিধা নেীয়ার কারণে সার্বিকভাবে এর কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আইটি/সফটওয়্যার খাতে নামে মাত্র অনেক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়, যার বেশিরভাগই আশার আলো দেখেনি; এতে করে অপচয় হয়েছে কোটি কোটি টাকা। যদি এখনও দুর্নীতি ও অনিয়ম অব্যাহত থাকে, তাহলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের ফলাফল নিয়েও সংশয় দেখা দিবে।
বিশেষ করে, ভূমি ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারে নাগরিক সেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে, এমন আশঙ্কাই বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প সম্পর্কিত বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এটি না হলে দেশের ডিজিটাল সেবা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে থাকবে, বিগত সরকারের আমলে যার অনেক নজির রয়েছে।
কেকে/ এমএস