সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
অর্থনীতি
বরুড়ার কচুর লতি রপ্তানি হচ্ছে ২০ দেশে
আল-আমিন কিবরিয়া, কুমিল্লা
প্রকাশ: রোববার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৬:০৫ পিএম
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্তত ২০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার কচুর লতি। এখানকার লতি খেতে সুস্বাদু ও গলায় না ধরায় দেশের বাজারেও এর চাহিদা রয়েছে বেশ তুঙ্গে। চাহিদার জোগান দিতে বছরজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে এই সবজির চাষ করেন উপজেলার কৃষকরা। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় লতি চাষ বেড়েই চলছে।

বর্তমানে উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে তিন হাজারের বেশি কৃষক লতি চাষ করছেন। বর্তমানে প্রতিদিন ৮০ টনেরও বেশি লতি রপ্তানি হচ্ছে বরুড়া থেকে। এতে ৩০-৩২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ আয় করছেন কৃষকরা।  

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার আগানগর, ভবানীপুর, খোশবাস ও শিলমুড়ি ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামে লতির চাষ হচ্ছে।

এ ছাড়া বাকি ১২টি ইউনিয়নেও বিচ্ছিন্নভাবে চাষ হচ্ছে লতি। বিজয়পুর, জগদাশার, আগানগর গ্রামে দেখা যায় ক্ষেত থেকে কচু ও লতি তুলে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকেরা। সেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে আটি বাঁধার কাজ করেন নারীরা। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বরুড়ায় এসে কৃষকের বাড়ি থেকে কচুর লতি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

মধ্যস্বত্বভোগীদের কয়েক হাত হয়ে এই লতি যায় রপ্তানিকারকদের হাতে। তবে কৃষকরা সরাসরি রপ্তানিকারকদের কাছে বিক্রির সুযোগ চান। স্থানীয়ভাবে শনি ও মঙ্গলবার বাদে প্রতি দিনই লতির হাট বসে আগানগর ইউনিয়নের বিজয়পুর গ্রামে।

মৌসুমে ৪৩৯ হেক্টরের জমিতে চাষ হলেও বর্তমানে লতির চাষ হয়েছে ১৪৭ হেক্টরেরও বেশি জমিতে। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই উপজেলার কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লতি সংগ্রহ করছেন।

এই কৃষি পণ্য লতিকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানও। কৃষকদের দাবি কৃষি বিভাগের হিসাবের চেয়ে বেশি পরিমাণে বাণিজ্যিকভাবে লতির চাষ হয়।

উপজেলার শিলমুড়ি, বিজয়পুর, জগদাশার, আগানগর, শরাফতী, মুড়াবাজাল ও বারাইপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কম খরচে লাভজনক একটি ফসল লতি। বছরে একবার কচুর চারা লাগালে অন্তত ৯ মাস পর্যন্ত গাছ থেকে লতি সংগ্রহ করা যায়। ২০১৫ সাল থেকে মূলত এই উপজেলায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে লতি চাষ শুরু হয়। বর্তমানে উপজেলাজুড়ে এর বিস্তার লাভ করেছে। দিন দিন বেড়েই চলছে লতি চাষ।      

বিজয়পুর গ্রামের কৃষক আলী আক্কাস বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে তিনি ধান বাদ দিয়ে লতি চাষ করছেন ১০ গণ্ডা (৬০ শতাংশ) জমিতে। খরচ হয় ২০-২২ হাজার টাকা। বছরে এক থেকে দেড় লাখ টাকার লতি বিক্রয় করা হয়। ধান থেকে লতিতে লাভ বেশি। বরুড়ার লতি নাম করা। বিদেশেও যায়। আমাকে দেখে অনেকেই এখন লতি চাষ শুরু করেছে।’

খোশবাস গ্রামের লতি চাষি হানিফ মিয়া বলেন, ‘কচু গাছ একবার লাগাইলে ৯ মাস বেচা (বিক্রি) করা যায়। হাটে নেওয়ার ঝামেলা নাই। ব্যাপারীরা বাড়িতে এসে নিয়ে যায়। প্রতি কেজি লতি বর্তমানে ৫৫-৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। আমি মনে করি লতির মতো লাভজনক আর কোনো কৃষি ফসল নেই।’

আগানগর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বরুড়ার লতি বিশ্ব বিখ্যাত। সারা দেশেও এর চাহিদা প্রচুর। বর্তমানে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও চাষিরা কচুর চারা নিতে আসছেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা আরো বৃহৎ আকারে চাষ করতে পারব।’

বরুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলায় মৌসুমে ৪৩৯ হেক্টরের জমিতে লতি চাষ করেন কৃষকরা। তবে বর্তমান সময়ে ১৪৭ হেক্টর জমিতে লতির চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫-২২ টন পর্যন্ত লতি উৎপাদন হয়। বাজারের দাম অনুসারে প্রতি টন ৪০,০০০-৮০,০০০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন কৃষকরা। একবার কচুর চারা রোপণ করলে বছরের ৮-৯ মাস পর্যন্ত প্রতিটি গাছ থেকেই লতি সংগ্রহ করা যায়। ৭ দিন পরপরই লতি তুলতে পারেন কৃষকেরা। বছরে বাণিজ্যিকভাবে ৭ হাজার ৭৫২ মেট্রিক টন লতি উৎপাদন হয় এই উপজেলায়। উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে লতি চাষ আরও সম্প্রসারণে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। স্বল্প খরচে অধিক লাভের কারণে লতি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বরুড়ার লতি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্তত ২০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।’

একধিক সিএন্ডএফ সবজি রপ্তানিকারক বলেন, ‘বরুড়ায় উৎপাদিত এ পানি কচু ও লতি ঢাকায় প্যাকেটজাত হয়ে কার্গো বিমানে বিশ্বের অন্তত ২২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশে। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের প্রায় সব দেশেও যাচ্ছে লতি ও কচু। এখান থেকে মাসে অন্তত আড়াই থেকে তিন লাখ ডলার আয় করছে বাংলাদেশ।’

কুমিল্লা জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ আজিজুর রহমান বলেন, ‘বরুড়ায় পানি কচু ও লতির চাষাবাদ বেড়েছে। রপ্তানির কারণে ভালো দাম পাচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা। মাঠে এসেই পাইকাররা লতি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে, কৃষকদের পরিবহন খরচও কমে যাচ্ছে। জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিসাররা সার্বক্ষণিক চাষিদের খোঁজ-খবর রাখছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।’

কেকে/ এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  বরুড়া   রপ্তানি   কুমিল্লা  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ

অর্থনীতি- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close