রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) অর্থ ও হিসাব দপ্তরের সহকারী পরিচালক পদে অভিজ্ঞতার শর্ত শিথিল করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় ব্যাখা তলব করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
গত ২৭ আগস্ট ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. মহিবুল আহসানের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এই ব্যাখা চাওয়া হয়।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) শর্ত শিথিলের অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা দেওয়ার বিষয়টি এ প্রতিবেদক অবগত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও নিজস্ব ওয়েবসাইটে ১৪টি শূন্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এর মধ্যে সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদের যোগ্যতার শর্ত শিথিল করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) (৭ম গ্রেড) পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীকে সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে। হিসাববিজ্ঞান বা ফাইন্যান্স বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা অগ্রাধিকার পাবেন। শিক্ষা জীবনে তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণি/সমমানের জিপিএ গ্রহণযোগ্য নয়। সেই সঙ্গে প্রার্থীর অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কাজে কমপক্ষে চার (৪) বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
তবে অভিযোগ উঠেছে, এখানে ‘অর্থ ও হিসাব বিষয়ক কাজে চার বছরের অভিজ্ঞতা’ বলেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। এতে করে তৃতীয় শ্রেণির কোনো কর্মচারীও ৭ম গ্রেডের (প্রথম শ্রেণি) পদে নিয়োগ পেতে পারে। তাছাড়া সরকারি বা স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় যেকোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও সরাসরি এই পদে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীত নীতিমালার দিক তুলে ধরে বলা হয়, ২০২০ সালের ২২ জুলাই প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে (স্মারক নম্বর: বেরোবি/রেজি/কর্মকর্তা নিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি/২০২০/৫৭৪) সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদের জন্য ‘সরকারি/স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা/সমমানের (গ্রেড-৯) পদে ন্যূনতম পাঁচ বছরের চাকরির বাস্তব অভিজ্ঞতা’ বাধ্যতামূলক ছিল।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পদোন্নতি নীতিমালা অনুযায়ী, সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদে পদোন্নতির জন্য হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (৯ম গ্রেড) পদে কমপক্ষে চার বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। অথচ সরাসরি নিয়োগে এই অভিজ্ঞতা শিথিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। তারা একে ‘নজিরবিহীন অনিয়ম’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর রশিদ বলেন, কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিষয়টি নির্ধারণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ডিকেট। অধিক সংখ্যক যোগ্য প্রার্থী যেন আবেদন করতে পারেন। সেজন্য শুধুমাত্র সরকারি চাকরি করেছে এমন ব্যক্তিদের পাশাপাশি যারা স্বীকৃত বড় বড় প্রতিষ্ঠানে আর্থিক দায়িত্ব পালন করেছেন, এমন অভিজ্ঞ ব্যক্তিও যাতে আবেদন করতে পারেন। সেটার ভিত্তিতে সিন্ডিকেটে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র সহকারী পরিচালক পদের জন্যই নয়, ৭ম গ্রেড থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন সকল পদগুলিতে যেন অধিক সংখ্যক যোগ্য প্রার্থী আবেদন করতে পারেন তার জন্য নিয়োগটিকে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, শিথিল করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে কী ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপনাকে যা বললাম সেখানেও (ইউজিসি) তা-ই উল্লেখ করা হয়েছে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আর পরিবর্তন হবে কি-না এ বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে, সবাই আবেদন করেছে। এরপর বাছাই করা হবে, লিখিত পরীক্ষার ভাইবার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
কেকে/ আরআই