লবণ আমদানি সিন্ডিকেটের কবল থেকে লবণ শিল্পকে বাঁচাতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কক্সবাজারের মহেশখালীর প্রান্তিক লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের মোহরাকাটা বাজারে এ সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লবণ চাষীরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সল্টের (শিল্প লবণ) নামে লবণ আমদানি বন্ধ করে দেশীয় লবণ শিল্পকে রক্ষার নিমিত্তে মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক লবণ চাষিদের উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার কথা বলেন এবং বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধ করার জোর দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ‘কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একমাত্র দেশীয় লবণ উৎপাদন কেন্দ্র। দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজারের। তার মধ্যে টেকনাফ ও মহেশখালীতে অন্যতম। এছাড়াও কক্সবাজার সদর, ঈদাগাঁও, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। গত মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় দেশীয় উৎপাদিত লবণ দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কক্সবাজারে ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। গত ১৭ মে পর্যন্ত ওই পরিমাণ জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ মেট্রিক টন বলে বিসিক দাবি করলেও লবণ চাষী ও লবণ ব্যবসায়ীদের দাবি প্রায় ২৬ লক্ষ মেট্রিক টনের অধিক লবণ উৎপাদন হয়েছে। লবণের ব্যবসায় করে কক্সবাজারের ৬০ শতাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘দেশে লবণ উৎপাদনের অতীতের রেকর্ড ভাঙ্গতে চাইলেও লবণ মিল মালিকদের সিন্ডিকেট লবণ উৎপাদন কমানোর জন্য চাষিদের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে নেমেছে। যাতে লবণ চাষিরা সামনের মৌসুমে লবণ চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং লবণ উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়।’
লবণ ব্যবসায়ী নুরুল কবির বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম কম হলেও বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০-৪৪ টাকায়। অন্যদিকে লবণ মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি করছে।’
লবণ চাষী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফ উল্লা সিকদার বলেন, ‘দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল লবণের নাম দিয়ে সরকারের মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে লবণ আমদানি করার পাঁয়তারা করছে লবণ কেন্দ্রীক একটি সিন্ডিকেট। যা দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।’
তিনি প্রান্তিক চাষীদের রক্ষার্থে লবণ আমদানী বন্ধের দাবি জানান।
কালালিয়া কাটা এলাকার লবণ চাষি জিয়া উদ্দীন বাবুল জানান, গত বছরে তিনি ১০ কানি জমিতে (কানিতে ৪০ শতক) লবণ চাষ করেন। মৌসুমজুড়ে তাপপ্রবাহ বিরাজ করায় লবণ ভালো উৎপাদিত হলেও দাম কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। লোকসান দিয়ে এখনও লবণ বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়, প্রতি মণ লবণ উৎপাদনের বিপরীতে চাষিদের খরচ হয়েছে ২২০-২৫০ টাকা।
দেশীয় লবণ শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা ও জনগণের জীবন জীবিকা রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন মহেশখালীর লবণচাষী ও ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লবণ চাষী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নুরুল কবির, আবু মুছা,নাজিম উদ্দীন, ফোরকান, মো. খোকন, রুহুল আমিন, মো. রমিজ, সাঈদ খোক, আবুল বশর, মইনউদ্দীন, শাহাবউদ্দীন শান্ত, আরিফউল্লাহ সিকদার।
কেকে/ এমএ