রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ। প্রার্থীরা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নিচ্ছেন একের পর এক অভিনব ও সৃজনশীল প্রচারণার কৌশল, যা পুরো ক্যাম্পাসে এনে দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য।
নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে প্রচারণা। প্রচলিত প্রচারপত্র ও মৌখিক প্রচারের পাশাপাশি এবার বড় জায়গা দখল করেছে সামাজিক মাধ্যম। ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে, সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি প্রচারণাও চলছে সমানতালে।
কেন্দ্রীয় সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শফিউল কালাম (কে এস কে হৃদয়) প্রচারণা করছেন গানে গানে। তিনি বলেন, “আমি গানের মানুষ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত। তাই এই মাধ্যমেই প্রচারণা করছি।” তার এই সুরেলা প্রচারণা ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে।
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের একই পদের প্রার্থী জাহিদ হাসান প্রচারণা করছেন গম্ভীরা গানের মাধ্যমে। লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, মাথায় মাথাল ও কাঁধে গামছা পরে ঐতিহ্যবাহী সাজে ভোট চাইছেন তিনি, যা উপস্থিত শিক্ষার্থীদের করেছে মুগ্ধ।
স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী মো. আব্দুল নূর প্রচারণায় এনেছেন ব্যতিক্রম। কর্কশিট কেটে বড় করে নিজের ব্যালট নম্বর লিখে শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, “দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই এমনটা করেছি। শেষ দুই দিনে আরও নতুন চমক থাকবে।”
মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি পদপ্রার্থী মীর কাদির তার প্রচারপত্রে এনেছেন ভিন্নমাত্রা। পুরোনো দিনের টেলিভিশনের ফ্রেমে নিজের ছবি, ব্যালট নম্বর এবং একটি কিউআর কোড যুক্ত করে প্রচারপত্র তৈরি করেছেন। কিউআর কোড স্ক্যান করলেই জানা যাবে তার ইশতেহার।
একই পদের অপর প্রার্থী ফাহির আমির শিক্ষার্থীদের কাছে তার অঙ্গীকারনামা খামে ভরে চিঠির মতো করে বিতরণ করছেন। এতে যুক্ত হয়েছে এক ব্যক্তিগত ও ঐতিহ্যবাহী ছোঁয়া।
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী রিয়াদ খান দুই টাকার নোটের আদলে প্রচারপত্র তৈরি করেছেন। তার ব্যালট নম্বর ২ হওয়ায় এ ডিজাইন বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “নোটের ডিজাইন আকর্ষণীয় হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে প্রচারপত্র নিচ্ছেন।”
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস (এষা) প্রচারপত্র তৈরি করেছেন হাতের আকৃতিতে। ব্যালট নম্বর ৫ হওয়ায় ‘হাতের পাঁচ’ দেখানোর কৌশল নিয়েছেন তিনি।
পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বী আতাউল্লাহ গাছ আকৃতির প্রচারপত্র বিলি করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক হিসেবে তিনি বলেন, এটি তার পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এবারের রাকসু নির্বাচনে প্রচারণার ভিন্নধর্মী রূপ নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে। এসব সৃজনশীল প্রচারণা শুধু প্রার্থীদের পরিচিতিই বাড়াচ্ছে না বরং ক্যাম্পাসে তৈরি করেছে এক ব্যতিক্রমী উৎসবমুখর পরিবেশ।
কেকে/ আরআই