সরকার বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে নতুন বাহিনী এয়ার গার্ড অব বাংলাদেশ (এজিবি) গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই বাহিনী গঠনের জন্য সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৩৯৭ কোটি টাকা।
এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি অন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উপবিভাগের প্রতিনিধি রয়েছেন। কমিটিকে এজিবি গঠনের জন্য সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, আইসিএওর নির্দেশনা অনুযায়ী বিমানবন্দরগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ বাহিনী গঠন সময়ের দাবি। প্রথমে এটি বাহিনী হিসেবে কাজ শুরু করবে, পরে অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হবে।
বর্তমানে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিচালনা করছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এবং বাইরের নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এছাড়া এভিয়েশন সিকিউরিটি সদস্যরা যাত্রী ও লাগেজ স্ক্রিনিং, নিষিদ্ধ সামগ্রী নিয়ন্ত্রণ, বিমান ও লাগেজ নিরাপত্তা, টহল কার্যক্রম এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার দায়িত্বে নিয়োজিত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের বিমানবন্দরগুলোর পরিধি বাড়লেও নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দিনে দিনে বিভিন্ন অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মধ্যে স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচার, যাত্রী হয়রানি, চুরি ও মানবপাচার উল্লেখযোগ্য।
এদিকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এপিবিএন ও আনসারের ৯০২ সদস্য দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ থাকে প্রায় ছয় ঘণ্টা। এরপর বিমানবাহিনী জরুরি ভিত্তিতে দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং বর্তমানে তারা বেবিচকের এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে।
তবে নিরাপত্তা দায়িত্ব নিয়ে সরকারি দুটি বাহিনীর মধ্যে বিরোধও লক্ষ্য করা গেছে। ২৪ আগস্ট বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এপিবিএনের অধিনায়ক মন্তব্য করেন, বিমানবাহিনী পুলিশকে সহায়তা করার পরিবর্তে রিপ্লেস করেছে। এর জবাবে বেবিচকের সদস্য (নিরাপত্তা) এয়ার কমডোর আসিফ ইকবাল অভিযোগ করেন এবং আইজিপির কাছে চিঠি পাঠান। পুলিশ কর্মকর্তারা বিষয়টি শিষ্টাচারবহির্ভূত দাবি মনে করছেন।
বর্তমানে বিমানবন্দরগুলোতে দিনে গড়ে প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা শক্তিশালী না হওয়ায় অপরাধীরা সহজেই কাজ করছে। তবে বেবিচক ও বিমানবাহিনী যৌথ উদ্যোগে লাগেজ চুরি, যাত্রী হয়রানি কমাতে এবং বিনামূল্যে ফোন বুথের মতো সেবামূলক পদক্ষেপ শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এ এয়ার গার্ড বাহিনী গঠন হলে বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে এবং যাত্রী সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
কেকে/ আরআই