জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার পতনের এক বছর পূর্তির পরেও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বাধ্যতামূলক অধ্যয়ন চলমান রয়েছে। এ কোর্সটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ স্টাডিজ’ নামে পরিচিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ‘বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজ’ গোবিপ্রবির আওতায় কার্যক্রম শুরু করে। এর আগে, প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। তবে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনে গবেষণা কেন্দ্রটি গোবিপ্রবির অধীনে আনা হয়। এরপর থেকে এর দায়িত্বে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভিন্নমত দমনের ঘটনাগুলো এড়িয়ে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘দেবতুল্য’ রূপে উপস্থাপন করা হয়। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কিংবা ‘মুজিব ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না’—এমন একতরফা ব্যাখ্যা সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের জন্য বিএলবি কোর্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের অবদানকে প্রায় উপেক্ষা করে শেখ মুজিবকে একক নেতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক বিল্লাল হোসেন অয়ন বলেন—গোবিপ্রবিতে ‘বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অফ লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজ’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘বঙ্গবন্ধু ইমার্জেন্স অফ বাংলাদেশ’ নামের বাধ্যতামূলক কোর্স চালু শিক্ষা নয় বরং নগ্ন চাটুকারিতার বহিঃপ্রকাশ। শেখ হাসিনার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে এসব উদ্যোগ ভয়াবহভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষা ও গবেষণার স্থান হওয়া উচিত মুক্তচিন্তার অথচ সেখানে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে একপাক্ষিক ইতিহাস ও রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরেও এসব কোর্স চালু থাকা শুধু দুঃখজনক নয় বরং প্রমাণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিভাবে ক্ষমতাসীনদের সেবায় ব্যবহার করা হয়েছিল। শিক্ষা যদি সত্যিই মুক্তির হাতিয়ার হয় তবে তাকে অবশ্যই দলীয় পক্ষপাত ও অন্ধ আনুগত্যের ঊর্ধ্বে দাঁড়াতে হবে।
গোবিপ্রবি ছাত্রদলের সভাপতি দুর্জয় শুভ বলেন—বাংলাদেশের ইতিহাস গঠনে এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, জিয়াউর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদসহ অনেকের অবদান রয়েছে। কিন্তু গত ফ্যাসিস্ট আমলে শুধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে বাধ্যতামূলক কোর্স চালু করা হয়েছিল। তাঁর শাসনামলের বিতর্কিত অধ্যায় যেমন: ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ, বাকশাল প্রতিষ্ঠা ও একদলীয় শাসন—এসব কিছুই সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। একজন ছাত্রনেতা হিসেবে আমি মনে করি, ইতিহাসকে একপাক্ষিকভাবে গ্লোরিফাই না করে ১৯৭২-৭৪ সালের বাস্তব চিত্রসহ সবার অবদান তুলে ধরা উচিত।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, কোর্সটির নাম পরিবর্তনের জন্য বলা হয়েছে। ডিন ও প্রতিটি বিভাগে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে কোন কোন বিভাগে বিষয়টি প্রয়োজন নেই।
পরিবর্তিত কোর্সে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুলাই নিয়ে একটি কোর্স থাকা অবশ্যই উচিত। একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনার মাধ্যমে সিলেবাসে সেটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
কেকে/ আরআই