থাকার কষ্ট, খাবারের কষ্ট, সব থেকে বড় কষ্ট বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পড়ে, ঘুমাতে পারেন না বৃদ্ধা ফজিলা বেগম। মানুষ দিলে খাবার খেতে পারেন, তা না হলে না খেয়ে থাকেন। বৃষ্টি হলে আরো সমস্যায় পড়ে যান। ঘরে পানি পড়ে, শোয়ার জায়গাও থাকে না। তবুও ভাঙা ঘরেই বসে থাকেন তিনি।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের মৃত ওমর ফারুকের স্ত্রী ফজিলা বেগমের জীবন কাটছে এভাবেই।
৬০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা বিধবা হয়েছেন এক যুগ আগে। দাম্পত্য জীবনে তিন ছেলে। তারাও প্রতিবন্ধী। বড় ছেলে ইফতিখার ৫ বছর ও মেঝো ছেলে সোহেল ৪ বছর আগে মারা গেছেন। ছোট ছেলে প্রতিবন্ধী জুয়েল ও নাতনী জান্নাতকে (১০) নিয়ে এক জীর্ণশীর্ণ ঘরে বসবাস করছেন তিনি।
ফজিলা বেগম জানান, গত ২২ বছর ধরে স্বামীর রেখে যাওয়া একমাত্র ঘরে বসবাস করছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের টিনের চাল মরিচা ধরে জরাজীর্ণ হয়ে বৃষ্টির পানি ভিতরে পড়ছে, চারপাশের বেড়া ও দরজা-জানালাগুলো ভাঙাচোরা। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে দেওয়া হয়েছে পলিথিন ও কম্বলের ছাউনি। একই অবস্থা শৌচাগারের।
বৃদ্ধা ফজিলা জানান, একটা থাকার ঘর পেলে জীবনের শেষ বয়সে শান্তিতে মরতে পারতাম। বৃষ্টি এলে তো ঘরের মধ্যে পানি পড়ে। কত কষ্ট করে থাকছি। দেখার কেউ নেই।
তিনি আরো জানান, আশপাশের মানুষ যে খাবার দেয় তা দিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে আছি। একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা তো দূরের কথা গত ২২ বছরে তার পছন্দমতো কোন খাবার আমি খাওয়াতে পারিনি। আমার মেঝো ছেলে মারা গেছে ৪ বছর হলো, তার রেখে যাওয়া একমাত্র মেয়ে, জান্নাতকে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছি, তাকে কোনদিন কিছু খাওয়া বা কেনার টাকাও দিতে পারি না।
স্থানীয়রা জানান, বৃদ্ধা ফজিলা বেগম সত্যিই একজন গরীব ও অসহায় মানুষ। সংসারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে তার জীবন চলছে। নতুন ঘর নির্মাণ করার সামর্থ্য তার নেই। তার একটি ছেলে জীবিত, সেও প্রতিবন্ধী। সরকারি কিংবা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার পাশে দাঁড়ালে তিনি শেষ জীবনটা ভালোভাবে কাটাতে পারবেন।
এদিকে গত (৩১ আগস্ট) রাতে তার বাড়ি থেকে মোবাইল ও চাল চুরির ঘটনা ঘটেছে। বৃদ্ধা ফজিলা বেগম জানান, মানুষের কাছে চেয়ে কিছু টাকা দিয়ে চাল কিনেছিলাম। গতরাতে আমার ভাঙা ঘর থেকে চাল চুরি হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন সিকদার বলেন, ফজিলা বেগম খুবই অসহায়। ভাঙা ঘরে বৃষ্টি-বাদল আর শীতের দিনে খুব কষ্ট হয় তার। মাথা গোজার ঠাঁই নেই। একটা ঘর হলে তিনি ভালোভাবে থাকতে পারবেন। তার ছেলে প্রতিবন্ধী ভাতা পান। ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে খুব দ্রুত তাকে সাহায্য করা হবে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ জানান, ফজিলা বেগমের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। খুব শীঘ্রই তার বিধবা ভাতার ব্যবস্থা হবে।পাশাপাশি বৃদ্ধা ফজিলা বেগমের ঘর তৈরির জন্য অর্থ সহায়তার বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল রনী স্যারের সাথে কথা বলবো।
কেকে/এআর