ফ্যাসিস্ট বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আশুলিয়া ও সাভার মডেল থানায় দায়ের হওয়া ৩ টি মামলার পুলিশ প্রতিবেদন (চার্জশীট) আদালতে দাখিল করা হয়েছে। চার্জশীট দাখিল করা মামলা তিনটির মধ্যে একটি সাভার মডেল থানায় ও ২ টি আশুলিয়া থানায় দায়ের করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবীর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রায় ১ বছর তদন্তের পর এই ৩ মামলার প্রতিবেদন দাখিল করলো পুলিশ।
সাভার মডেল থানার তথ্য মতে, সাভারে শহীদ হওয়া নবী নুর মোড়লের স্ত্রী আকলিমা বেগম বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ১২৫ জনে নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০০-৩০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় এজাহারনামীয় আসামিদের সম্পর্কে নানাভাবে তদন্ত করা হয়। তদন্ত সাপেক্ষে এজাহারনামীয় ১২৫ আসামির মধ্যে ১১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করা হয়। এই মামলায় ১৮ জন এজাহারনামীয় আসামীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এমনকি ঘটনার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ না থাকায় এই মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এই মামলায় চার্জশীটভুক্ত আসামিদের মধ্যে অন্যতম সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক ত্রাণ ও দূর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল গণি, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফকরুল আলম সমর, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেনসহ ১১৪ জন।
আশুলিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত মামুন খন্দকারের স্ত্রী মোসাম্মৎ সাথী গত বছরের ২২ আগস্ট আশুলিয়া থানায় ৩৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলার তদন্তে আরও ১৯ জন আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদেরসহ মোট ৪৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করা হয়। এছাড়া এই মামলার এজাহার বহির্ভূত ১ জন ও এজাহারনামীয় ৭ জনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
চার্জশীটভুক্ত আসামীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম, ইয়ারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম আহম্মেদ সুমন ভূঁইয়া, আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির সরকার, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এনামুল হক মুন্সী, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা লীগ নেত্রী মনিকা হাসান, ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি, মো. ছবেদ আলী, আশুলিয়া থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মইনুল ইসলাম ভূইয়া, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মারুফ হোসেন সরদার, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিদুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার সাবেক ওসি এএফএম সায়েদ, সাবেক তদন্ত ওসি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, ওসি অপারেশন নির্মল কুমার দাশ, ঢাকা জেলা উত্তরের সাবেক ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (অ্যাডমিন) হোসেন শহীদ চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের ৪৫ নেতাকর্মী।
চার্জশীট দাখিল করা আশুলিয়া থানার অপর মামলাটি গত বছরের ২৮ আগস্ট দায়ের করেন শহীদ রমজান আলীর বাবা নজরুল ইসলাম। এই মামলায় ৬০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলায় এজাহারনামীয় ৪৯ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট আদালতে দাখিল করা হয়। আর ১৭ জনের বিরুদ্ধে কোন তথ্য প্রমাণ ও ঘটনার সাথে জড়িত না থাকায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ মামলাটিতেও সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ফারুক হাসান তুহিন, সাবেক চেয়ারম্যান মো. পারভেজ দেওয়ান, সুমন ভূইয়া, কবির সরকার, ধামসোনা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল সিকদার ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর মিয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের ঢাকা জেলার সংগঠনিক সম্পাদক মো. জালাল, সাবেক ওয়ার্ড সদস্য সাদেক ভুইয়াসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করা হয়।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির বলেন, ‘সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো খুব সুক্ষ্মভাবে তদন্ত চলছে। যার মধ্যে ৩টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন পর্যায়ক্রমে আদালতে দাখিল করা হবে।’
কেকে/ এমএ