আলো আসার আগে যে অন্ধকার গাঢ় হয়ে ওঠে, সেই সত্যকে উপজীব্য করেই নির্মিত হয়েছে সিনেমা ‘অন্ধকারে আলো’। বাস্তব জীবনের সংগ্রাম আর সম্ভাবনার গল্পে বোনা এই চলচ্চিত্রটি এখন কেবল মুক্তির অপেক্ষায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে ছবিটি অনকাট ছাড়পত্র পেয়েছে, যা নির্মাতাদের জন্য এক বড় স্বস্তি। তবে এখনো সেন্সরে রয়েছে সিনেমার পোস্টার ও ট্রেলার। সেগুলোর অনুমোদন মিললেই ঘোষণা করা হবে বহু প্রতীক্ষিত মুক্তির তারিখ।
গত ৩ সেপ্টেম্বর, রাজধানীর মগবাজারে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক জমজমাট পরিচিতি সভায় সিনেমার নবাগত জুটি রাকিব ও মুসকান-এর সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেন পরিচালক আনোয়ার সিরাজী। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনেমার প্রযোজক ও গল্পকার মীর লিয়াকত আলী।
সিনেমাটির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাকিব ও মুসকান। তাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ফরহাদ, রেবেকা, জ্যাকি আলমগীর, ফিরোজ আলম, ববি, রেজা হাসমত, অলকা সরকার, তিথী, সানু এবং স্বয়ং পরিচালক আনোয়ার সিরাজী। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আবু বকর সিদ্দিক, অর্জুন কুমার বিশ্বাস, সাজু আহমেদ এবং রেহেনা আক্তার জ্যোতি।
আকাশজমিন প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত এই সিনেমাটি শুধু বিনোদনই নয়, দর্শকদের অন্তর স্পর্শ করবে সমাজ সচেতনতার এক উজ্জ্বল বার্তা নিয়ে।
কাহিনির পরতে পরতে অন্ধকার পেরিয়ে আলোর সন্ধান
‘অন্ধকারে আলো’ মূলত এক ধীকৃত যুবকের আত্মজাগরণের গল্প। অন্ধকার এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেওয়া কুতুব আলী নামের তরুণ, যার জীবনের প্রথম পাঠই ছিল অবহেলা। চরিত্রহীন বাবার নির্যাতন, পারিবারিক কলহ, প্রেমে পরাজয় এবং শিক্ষাজীবনে ব্যর্থতার কারণে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সে। এক সময় হতাশায় ডুবে গিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় কুতুব। কিন্তু তার জীবনের মোড় ঘুরে যায় এক আবুল চাচার সহানুভূতিতে।
ঢাকায় এসে প্রথমেই ছিনতাইয়ের শিকার হলেও, ভাগ্য যেন অপেক্ষা করছিল নতুন গল্প লেখার জন্য। এক নামকরা পত্রিকার সম্পাদক তাকে আশ্রয় দেন—গাড়ি ধোয়ার কাজ দিয়ে শুরু হলেও, সেখান থেকেই কুতুব আলীর জীবন নবজন্ম পায়। অধ্যবসায় আর অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে সে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে, সেই পত্রিকারই সম্পাদক হয়ে ওঠে। বিয়ে করে সম্পাদক কন্যাকে।
কিন্তু তার গল্প এখানেই শেষ নয়। নিজের শেকড় ভুলে না গিয়ে কুতুব গোপনে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করে একটি আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা অন্ধকার সমাজকে আলো দেখাতে শুরু করে।
চলচ্চিত্রের ক্লাইম্যাক্সে, দীর্ঘ ২৪ বছর পর সেই স্কুলের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে ফিরে আসে কুতুব আলী। অনুষ্ঠানের এক আবেগঘন মুহূর্তে বহু বছর পর তার বাবার সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটে—তবে ছেলের বুকে মাথা রেখেই মৃত্যুবরণ করেন তার পিতা। এই হৃদয়বিদারক অথচ অনুপ্রেরণায় ভরপুর পরিণতি দর্শকদের চোখে জল এনে দিতে বাধ্য।
শেষ কথা
‘অন্ধকারে আলো’ শুধু একটি সিনেমা নয়—এটি জীবনের বাস্তবতা, সংগ্রাম, ক্ষমা ও আলোর পথের এক চলচিত্র। এই গল্পে আছে ভাঙা স্বপ্নকে নতুনভাবে গড়ার সাহস, সমাজের অন্ধকার কোণ থেকে আলোয় ফেরার এক জাগরণ।
চলুন, অপেক্ষা করি—আলোকিত সেই পর্দার মুহূর্তটির, যখন আমরা সবাই দেখতে পাবো কিভাবে অন্ধকার ভেদ করে আলো আসে।
কেকে/এজে