ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন তুমুল সরগরম। প্রার্থীদের প্রচারণা থেকে শুরু করে সমালোচনা সবকিছুই মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। কিন্তু এই প্রচারণার ভিড়ে ভিন্ন এক শঙ্কায় পড়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা। বিশেষ করে রাজনৈতিক আলোচনা-সমালোচনার বাইরে সামাজিকমাধ্যমে অনিরাপদ হয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা।
সাইবার জগতে ক্রমাগত হেনস্তা, অপতথ্য ও গুজবের শিকার হচ্ছেন তারা। এতে প্রধান লক্ষ্য আলোচিত নারী প্রার্থীরা। প্রার্থীদের লক্ষ্য করে চলছে ট্যাগিং, বডি শেমিং, বুলিং, গুজব, কটূক্তি, বিদ্বেষমূলক প্রচার, প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানোসহ নানা ধরনের সাইবার অপরাধ। এ ছাড়াও সাইবার হামলার মাধ্যমে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সংগঠনের পেইজ, বাটবাহিনীর উপদ্রবও চলছে ভয়াবহভাবে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ আগের তুলনায় চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। ঘোষিত প্যানেলগুলোর মধ্যে পাঁচটিতে নেতৃত্ব দেবেন নারীরা। ভিপি পদে লড়ছেন দুইজন, জিএসে একজন এবং এজিএসে আরো দুজন। সম্পাদক ও সদস্য পদেও রয়েছেন একাধিক নারী।
কিন্তু বাড়তি অংশগ্রহণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অনলাইন হয়রানি। সামাজিক মাধ্যমে নারী প্রার্থীদের উদ্দেশে বডি শেমিং, বুলিং, কটূক্তি, ট্যাগিং, এমনকি বিদ্বেষমূলক প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে অবিরাম।
প্রথম প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। এরপর থেকেই নানা গুজব ছড়ানো শুরু হয় তাকে ঘিরে। সুফিয়া কামাল হলে কেবল বাম রাজনীতিকে অনুমোদন দেওয়ার পক্ষে তিনি অবস্থান নিয়েছেন এমন মিথ্যা তথ্য ভাইরাল করা হয়। যদিও উমামা দাবি করেছেন, তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা হলে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছি। বাম, ডান, ইসলামিকÑ সব সংগঠনকেই এতে অন্তর্ভুক্ত করেছি।
তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত আক্রমণ, বিশেষ করে শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে কটূক্তিও ছড়ানো হচ্ছে। অন্যদিকে, ছাত্রশিবিরের চার নারী প্রার্থীও প্যানেল ঘোষণার পর থেকেই অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তাদের সহকর্মীরা।
ভিপি পদপ্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বলেন, নারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসছেন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। ফাতিমা তাসনিম জুমা, সাবিকুন্নাহার তামান্না বা উম্মে ছামা ডান বা বাম ঘরানার কেউই এই অনলাইন সন্ত্রাস থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
নারী প্রার্থীদের পাশাপাশি পুরুষ প্রার্থীরাও অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন। ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আবিদ স্পষ্টভাবে তা অস্বীকার করেছেন। তার ভাষায়, আমার পরিবারে কেউ রাজনীতিতে ছিল না। গণরুম ও গেস্টরুমের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমি প্রথমে হল ছাড়ি। পরে ছাত্রদলে যোগ দিই। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে প্রতিদ্বন্দ্বীরা গুজবে নেমেছে। অভিযোগের তির ছুড়েছেন তিনিও শিবিরের দিকেই। এদিকে সামাজিক মাধ্যমে শিবিরের প্রার্থীদেরও ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।
ঢাবি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ডাকসু নির্বাচন ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে বট অ্যাকাউন্টগুলোর কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফেক প্রোফাইল থেকে উল্টোপাল্টা প্রতিক্রিয়া, মিথ্যা তথ্য, নেতিবাচক মন্তব্য এবং হ্যাশট্যাগ প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ফলে প্রার্থীরা শুধু হেয়প্রতিপন্নই হচ্ছেন না, অনেকে হুমকি-ধমকিও পাচ্ছেন।
এদিকে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে ডাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কেকে/ এমএস