ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইউ) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আব্দুল বাসেদ শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন। একই সঙ্গে বিভাগটির শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। ফলে বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, সম্প্রতি ইভিনিং শিফটের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিভাগের এক শিক্ষিকার ছবি এডিট করে প্রকাশ করার অভিযোগে জড়িত ছিলেন। দায়ী শিক্ষার্থীদের ডেকে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হলেও তারা এটিকে হুমকি হিসেবে গ্রহণ করেন। এরপর পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। গত শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকাল থেকে কয়েক ব্যাচের শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যানকে সরিয়ে সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেককে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি অন্যতম ছিল। একপর্যায়ে আন্দোলনের চাপের মুখে অধ্যাপক আব্দুল বাসেদ পদত্যাগ করেন।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, সুষ্ঠু বিভাগীয় পরিচালনা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ এবং একাডেমিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ এবং ইইই ব্যাকগ্রাউন্ডের চেয়ারম্যান থাকা অত্যন্ত জরুরি। তারা অভিযোগ করেন, একজন শিক্ষক দুইটি বিভাগের চেয়ারম্যান হওয়া, প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থতা, যোগাযোগে অনীহা, স্বজনপ্রীতি, নিজস্ব গ্রুপিং এবং পক্ষপাতমূলক পরিচালনা। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রভাব ও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মাধ্যমে বিভাগের পরিচালনার অভিযোগও তুলেছেন।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক মনে করে প্রভাষক সারিকা মানজুম ইসলাম বলেন, ‘যখন তিনি সিএসই বিভাগের অ্যাকটিং চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন আমাদের ফ্যাকাল্টি সদস্য এবং দুই শিফটের শিক্ষার্থীদের জানিয়েছিলেন যে, তিনি দীর্ঘ সময় এখানে থাকবেন না এবং ডিপার্টমেন্ট যোগ্য চেয়ারম্যানের হাতে হস্তান্তর করবেন। তাই কিছুদিনের জন্য যে ব্যক্তি দায়িত্বে আছেন, তাকে সরানোর দাবি আমার কাছে যৌক্তিক মনে হচ্ছে না।’
অধ্যাপক বাসেদ অভিযোগ করেন, একটি পুরোনো সমস্যাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা তার বক্তব্যকে ‘হুমকি’ হিসেবে নিয়েছে। আর এ সুযোগে ইভিনিং শিফটের কয়েক ব্যাচ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে।
আন্দোলনকে ‘প্রতিবিপ্লব’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তারেক বলেন, গত বছর আমার সাথেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার দুই বছর পর কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী মব সৃষ্টি করেছিল। একটি বিপ্লবের যেমন প্রতিবিপ্লব থাকে, তেমনি শিক্ষার্থীরা এক বছর ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছিল। তাই এই ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্ন গ্রুপের কারণে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়েছে।
কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে ইইই বিভাগের প্রভাষক ও কো-অর্ডিনেটর হাসিবুল হাসান ভূঁইয়া আবিদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আচরণ আমাদের শিক্ষকদের প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এজন্য আমরা কর্মবিরতিতে যাচ্ছি। যদি এই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, আমরা সবাই পদত্যাগ করব।’
প্রভাষক সারিকা মানজুম ইসলাম বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীদের আমরা শিক্ষা দিচ্ছি, যদি তাদের দ্বারা আমরা অসম্মানিত হই তাহলে তাদেরকে শিক্ষা দিতে আমাদের স্বস্তি বোধ হওয়া কঠিন। সেই অবস্থান থেকে আমরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ঘটনার পর রোববার (১৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনিবার্য কারণ দেখিয়ে ইইই বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো পর্যালোচনার জন্য চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. টি. এম. মাহমুদুর রহমান সরকারকে আহ্বায়ক করে এ কমিটিকে তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ডিআইইউ রংপুরীয়ান পরিবার, গাইবান্ধা জেলা ছাত্র সমিতি, ইইই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনসহ বেশ কিছু সংগঠন এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এদিকে শিক্ষকদের মধ্যে পদত্যাগ, কর্মবিরতি ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। ফলে বিভাগের ভবিষ্যৎ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে কিনা—সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।
কেকে/ এমএস