বেশি দামের আশায় হিমাগারে আলু মজুদ রেখে বিপাকে পড়েছেন গঙ্গাচড়ার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য বছর এ সময়ের মধ্যে হিমাগারের আলুর অধিকাংশ বিক্রি হয়ে যায়। তবে এবারের চিত্র পুরো উল্টো। আলুর দরপতনে হিমাগার ভাড়া বাদে কেজি প্রতি কৃষক আলুর দাম পাচ্ছেন ৬ টাকা। এতে বস্তা প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, কৃষকরা অনেকেই বাড়তি আলু হিমাগারে রাখেন মুনাফার জন্য। এতে তাদের বাড়তি খরচও হয়। তাছাড়া ব্যবসায়ীরাও আলু কিনে কোল্ডস্টোরেজে রাখেন। আলু তোলার মৌসুমে এক বস্তা আলুর দাম ছিল ১ হাজার টাকা। সেই আলু হিমাগারে বাড়তি খরচ হিসেবে ভাড়া প্রতি বস্তা (৬৫ কেজি) ৩৮৫ টাকা, বস্তা ১০০ টাকা এবং পরিবহন খরচসহ মোট ৫০০ টাকা বেশি লাগছে। বর্তমানে হিমাগারে এক বস্তা (৬৫ কেজি) আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা।
প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ে ১২ টাকা। এর মধ্যে হিমাগারের ভাড়া ৬ টাকা। কৃষকরা দাম পাচ্ছেন কেজি প্রতি ৬ টাকা। মৌসুমের সময় বস্তা প্রতি তাদের খরচ হয় কার্ডিনাল ও এস্টারিক্স জাতের আলু ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। ফলে বস্তা প্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। গত বছর আলু চাষে লাভ হলে কৃষকরা এ বছর ব্যাপক আকারে আলু চাষ করে। হিমাগারেও ব্যাপক আলু সংরক্ষণ করে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। দুই বছর আগে লোকসানের কারণে কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা শেষ পর্যন্ত হিমাগার থেকে আলু বের করেনি। ফলে সে সময় হিমাগার মালিকরাও লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে। এ বছরও একই অবস্থা হবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। আলুর উৎপাদন ভালোই হয়েছিল।
আলু বিক্রি করে ধারদেনা পরিশোধ করবে এ আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আশা করে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেছেন। হাবু কুটিরপাড় গ্রামের কৃষক ও ব্যবসায়ী আফসারুল বলেন, তিনি এ বছর বাড়ির আবাদ ও কিনে ১ হাজার ৫০০ বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন। প্রতি কেজিতে বস্তা, পরিবহন ও অন্যান্যসহ দাম পড়েছে প্রায় ২০ টাকা। বর্তমানে কোল্ডস্টোরেজে যে দাম সে অনুযায়ী কেজি প্রতি লোকসান তার ১৪ টাকা।
ময়নাকুঠি কোল্ডস্টোরেজের জেনারেল ম্যানেজার সেরাজুল ইসলাম বলেন, এ বছর কোল্ডস্টোরেজে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৫৮ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ হয়েছে, যা স্টোরেজ চালু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ। তিনি আরো বলেন, এবারে কৃষকের আলুই বেশি। ১০ ভাগ আলু নেই ব্যবসায়ীর। এ বছর আলু ভাড়া বস্তা প্রতি (৬৫ কেজি) নেওয়া হচ্ছে ৩৮৫ টাকা। বর্তমানে স্টোরে আলু বিক্রি খুব কম। লসের কারণে কৃষকরা আলু বিক্রি করছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, এ বছর আলুর আবাদ বেড়েছে। উৎপাদনও বেড়েছে। আর কৃষকরাও আলু সংরক্ষণ করেছে বেশি। তাছাড়া এ সময় বাজারে অন্যান্য সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় আলুর দাম কমে গেছে। সরকার এ মুহূর্তে আলু রপ্তানির ব্যবস্থা করলে কৃষকরা আলুর দাম পেত।
কেকে/এএস