পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ছবি : খোলা কাগজ
পাট এক সময় সোনালি আঁশ নামেই সর্বাধিক পরিচিত ছিল। এখন আবার পাটের সেই সুদিন ফিরেছে। চলতি বছরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ৮১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পাট চাষে উৎসাহিত করতে উপজেলার এক হাজার কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ।
চলতি বছরে উপজেলায় তোষা, কেনাফ, মেস্তাসহ কয়েকটি জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। পাট মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। অন্য বছরের তুলনায় এবার পাটের ভালো ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।
কৃষকেরা জানান, সময়মতো পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে ঢলের পানি না এলেও কিছুদিন আগে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন জলাশয়ে পানি জমে। সেই পানিতেই এখন চাষিরা পাট কেটে নদী-নালা, খাল-বিল ও ডোবায় জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং হাটবাজারে তা বিক্রিসহ এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে উপজেলার কিছু কিছু উঁচু এলাকায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে উপজেলার তাড়াশে ৮১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পাট চাষে উৎসাহিত করতে উপজেলার এক হাজার কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করেছে কৃষি বিভাগ। বপন মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় সম্পূরক সেচে কৃষকের খরচ বৃদ্ধি পায়নি। তা ছাড়া আবহাওয়া পাট চাষের অনুকূলে থাকায় রোগবালাই ও পোকার আক্রমণও কম হয়েছে। আর পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার পাট চাষে ঝুঁকেছে কৃষক। গত বছর পাটের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষক পাট চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। অনেক কৃষকই বলছেন পাটচাষিদের সুদিন ফিরেছে।
পাটের বাম্পার ফলন। ছবি : খোলা কাগজ
উপজেলার কালিদাসনীলি গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, সে এবছর ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। এক বিঘা জমিতে পাট চাষে প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়। পাট উৎপাদন হয় প্রায় ৮-১১ মণ। যার বাজারদর প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়া বিঘা প্রতি প্রায় ২ হাজার টাকার পাটকাঠি পাওয়া যায়। এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০-৩৮০০ টাকা।
তাড়াশ পৌর এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, বর্তমানে প্রকার ভেদে বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১১ মণ পর্যন্ত ফলন হচ্ছে। একদিকে বিঘা প্রতি প্রায় ১০ থেকে ১১ মণ হারে পাট এবং ১ হাজার ২০০ হাতা পাটখড়ি পাওয়ায় যায়। যা বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ হয়। পাটের পাতা জমিতে পড়ে পচে গেলে কম্পোস্ট সার তৈরি হয়। এতে জমির মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধিসহ রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে আসে। সবদিক থেকে পাট চাষ লাভজনক।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শর্মিষ্ঠা সেন গুপ্তা বলেন, আমার এলাকায় সবে পাট কাটা শুরু হয়েছে। পাট চাষাবাদে কম খরচ ও পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তাই চাষিদের সোনালি আঁশ চাষাবাদে বিনামূল্যে বীজসহ মাঠ পর্যায়ে নানা ধরনের পরার্মশ ও সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে উঁচু, নীচু, পতিত জমিতে কৃষকদের পাট চাষাবাদে উৎসাহিত ও পরামর্শ দিয়েছি। কৃষকরা পরামর্শ মতে পাট চাষাবাদ করেছেন। এবার পাটের ভালো ফলন এবং দামে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।