গাজীপুরে সংসদীয় আসন বাড়ায় খুশি এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক নেতারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের অংশ হিসেবে গাজীপুরে একটি সংসদীয় আসন বাড়ান হয়েছে। জেলায় আগে ছিল পাঁচটি আসন, এখন একটি বেড়ে হবে ছয়টি সংসদীয় আসন।
বুধবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, গাজীপুরের জনসংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। এ কারণে গাজীপুরে একটি সংসদীয় আসন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মূলত গাজীপুর-১ ও গাজীপুর-২ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে গাজীপুর-৬ নামে একটি সংসদীয় আসন বাড়ানো হয়েছে। এটি গাজীপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। একটি আসন বাড়ানোয় খুশি স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক নেতারা। এ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা।
প্রস্তাবভিত্তিক ছয়টি সংসদীয় আসনের নির্বাচনী এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে :
গাজীপুর-১ : গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভাসহ উপজেলা এলাকা এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা নিয়ে গাজীপুর-১ সংসদীয় আসন প্রস্তাব করা হয়েছে।
গাজীপুর-২ : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা এবং গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে গাজীপুর-২ সংসদীয় আসনের নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
গাজীপুর-৩ : গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভাসহ উপজেলা এলাকা এবং গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়ালগড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন ও গাজীপুর সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গাজীপুর-৩ সংসদীয় আসনের নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত করে
গাজীপুর-৩ সংসদীয় সীমানা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
গাজীপুর-৪ : গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলা এলাকা নিয়ে গাজীপুর-৪ সংসদীয় আসন আগের মতো ঠিক রাখা হয়েছে।
গাজীপুর-৫ : এই আসন গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলা এলাকা নিয়ে আগের মতো অখণ্ডিতই রাখা হয়েছে।
গাজীপুর ৬ : নতুন সীমানা নির্ধারণের প্রস্তাবে গাজীপুরের এই আসন নতুন করে বাড়ানো হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন আসনটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা নিয়ে গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে গাজীপুর-১ ও গাজীপুর-২ থেকে সিটি করপোরেশনের কয়েকটি ওয়ার্ড আলাদা করে একটি আসন বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল বলেন, জেলায় একটি আসন বাড়ানোতে নিশ্চয়ই ভালো হয়েছে। তবে বাসন থানা গাজীপুর-১-এর সঙ্গে ছিল, সেটিও খারাপ ছিল না। নির্বাচনী এলাকা ভাগ হওয়াতে এখন সাধারণ মানুষের সুবিধা হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, গাজীপুর-২ আসনের এলাকা কমানো খুবই ভালো হয়েছে। এটি আরও আগেই করা উচিত ছিল। এখন এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ অনেক কাজই সুন্দরভাবে করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামের আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘জনসংখ্যার অনুপাতে গাজীপুরে যে একটি সংসদীয় আসন বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে সেটা কি আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অ্যাডভোকেট আলী নাসের খান বলেন, দেশের মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশন একটি বৃহত্তম সিটি করপোরেশন। এখানে একটি আসন বাড়ানো হয়েছে, এটি খুব ভালো ও প্রশংসনীয় কাজ হয়েছে। এর মাধ্যমে গাজীপুরের মানুষ উপকৃত হবেন। সংসদে একজন প্রতিনিধি বাড়বে। ফলে এলাকার উন্নয়নসহ নানাভাবে মানুষ উপকৃত হবেন।
আসন বাড়ানোর বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাজহারুল আলম বলেন, গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানোর জন্য আমি নির্বাচন কমিশন বরাবর আবেদন করেছিলাম। এজন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনের কমিশনারদের সঙ্গেও কথা বলেছি। একটি আসন বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। তারা বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, গাজীপুর-২ আসনে পৌনে ৮ লাখ ভোটার ছিলেন। দেশের কোনো একক আসনে এত ভোটার নেই। এ কারণে এখানে আরো একটি আসন বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। আসন বাড়ানোতে আমাদের দাবি পূরণ হয়েছে, বৈষম্য দূর হয়েছে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, এর দ্বারা গাজীপুরের মানুষ উপকৃত হবেন।
কেকে/এএম