‘ভাই-বোনেরা রাস্তায় রক্ত দিচ্ছে, আমি ঘরে বসে থাকব কেন?’—এই প্রশ্ন থেকেই নতুন বাজারের রাস্তায় নেমেছিলেন রনি। আন্দোলনের সেই দিনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আজও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন ৪টি রাবার বুলেটের যন্ত্রণা।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ছাত্র মেহেদী হাসান রনি। জুলাই ২৪-এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলোতে যিনি হয়ে ওঠেন নতুন বাজারের মিছিলে সবচেয়ে পরিচিত মুখ। পুলিশের রাবার বুলেট তার শরীর ঝাঁঝরা করে দেয় তবু আজও তিনি লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে আছেন।
১৩ ও ১৪ জুলাই পুলিশের দমন-পীড়নের ছবি ছড়িয়ে পড়তেই রনির ভেতরে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। ১৫ জুলাই তিনি সহপাঠীদের নিয়ে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন নতুন বাজার ব্লকেডে। সেখান থেকেই শুরু হয় তার জীবনের ভয়ঙ্কর অধ্যায়।
সেই রাতেই শুরু হয় হামলা, হুমকি, ভীতি প্রদর্শন। তবুও থেমে থাকেননি রনি। বন্ধু আহত হয়েছেন, নিজে হুমকি পেয়েছেন কিন্তু পিছিয়ে যাননি। সাতারকুলে থাকার সময় একাধিকবার ফোনে ভয় দেখানো হয়েছিল তবু তার কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা।
১৮ জুলাই ভোরে তিনি আবারো রওনা দেন নতুন বাজারের দিকে। তখন এনএসইউ, এআইইউবি, ব্র্যাক, আইইউবি, এমআইইউ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিসহ অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হন। রনি ছিলেন মিছিলের সামনের সারিতে। মাইকে স্লোগান দিতে দিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু লিংক রোডে পৌঁছাতেই পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় শুরু হয় টিয়ারশেল, রাবার বুলেটের বৃষ্টি।
কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রনি গুলিবিদ্ধ হন। শরীরে একে একে লাগে ১৪টি রাবার বুলেট। সহপাঠীরা আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে গোপনে আত্মীয়ের বাড়িতে রাখা হয়। এরপর নদীপথে কৌশলে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে তার শরীর থেকে ৯টি বুলেট বের করা হয়। গলার ভেতরের একটি বুলেট আলাদা করে অপারেশন করতে হয়। কিন্তু এখনো তার শরীরে রয়ে গেছে ৪টি রাবার বুলেট।
আজও রনি সেই বুলেটের ব্যথা বয়ে বেড়ান। শরীরে ক্ষতচিহ্ন আছে কিন্তু চোখে অনুতাপ নেই। তিনি শুধু বলেন—‘আমার শরীরে গুলি লেগেছে মানে ওরা হাজার শিক্ষার্থীর কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি থামিনি, আজও থামিনি।’
কেকে/এএস