রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) এবং উত্তরবঙ্গের প্রতি অনন্তকালের বাজেট বৈষম্য নিরসনের দাবিতে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ‘মডার্ন মোড় ব্লকেড’ দিয়েছে বেরোবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল মডার্ন মোড়ে এসে অবস্থান করে দুই দফা দাবি ঘোষণা করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, রংপুরে বাজেট দে’, ‘লাশ লাগলে লাশ নে, রংপুরে বাজেট দে’, ‘ঢাবির সিন্ডিকেট ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ইন্টারিমের দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ভিক্ষা লাগলে ভিক্ষা নে, রংপুরে বাজেট দে’, ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা রংপুরের বৈষম্য নিরসনের জন্য দুই দফা দাবি দুই দফা ও আল্টিমেটামের ঘোষণা দেন বেরোবি শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দুই দফা :
১. উত্তরবঙ্গের অনন্তকালের বাজেট বৈষম্য নিরসন ও এ অঞ্চলের সার্বিক (অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও অবকাঠামোগত) উন্নয়ন নিশ্চিতে একটি স্বতন্ত্র আঞ্চলিক কমিশন গঠন করতে হবে।
২. উত্তরবঙ্গের বাতিঘর অর্থাৎ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্বায়ত্তশাসিত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম :
১. আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি আদায় না হলে উত্তরবঙ্গ ব্লকেড ও উত্তরবঙ্গ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
২. আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উপর্যুক্ত ২ দফা দাবি আদায়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শিবলী সাদিক বলেন, জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো প্রকার বৈষম্য থাকবে না, কিন্তু আমরা জুলাই পরবর্তী সময় দেখতেছি সরকার রংপুর এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাজেট বৈষম্য করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসরুম সংকট, আবাসন সংকট এবং রংপুরের নানা উন্নয়নে কোনো বাজেট দেননি এই অন্তবর্তীকালীন সরকার । আমরা চাই এই সকল কাজের জন্য বাজেট প্রণয়ন করা হোক এবং রংপুরে তিস্তা পরিকল্পনাসহ সকল প্রকার বৈষম্য দূর করার জন্য আজকের এই আন্দোলন।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান জয় বলেন, রংপুর এবং বেগম রোকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছরের ন্যায় এই বছর আমরা বাজেট বৈষম্য দেখতে পেয়েছি। আমরা ভেবেছিলাম ২৪-এর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পর এ ধরনের বৈষম্য দূর হবে। কিন্তু এখনো কোনো বাজেট বৈষম্য দূর হয়নি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ রংপুরের উন্নয়ন কাজে ন্যূনতম কোনো বাজেট প্রণয়ন করা হয়নি। তাই আমরা এই বৈষম্য নিরসনের দাবিতে রাজপথে নেমেছি।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো একটি অডিটোরিয়াম নেই। নেই কোনো টিএসসি। পর্যাপ্ত বাস ও ক্লাসরুমের অভাবে শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। আমরা চাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরবঙ্গের একটি পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হোক।
উল্লেখ্য, রোববার (২৭ জুলাই) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৮ হাজার ১৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১২টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ২৮৪০ কোটি টাকা বাজেট অনুমোদন করা হয় । কিন্তু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কোনো বাজেট অনুমোদন করা হয়নি। উত্তরবঙ্গের জন্য বাজেট বরাদ্দ শূন্য।
কেকে/এএম