পাবলিক বাসে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থীর ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় অপরাধীদের গ্রেফতার করতে প্রশাসনকে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৩ জুলাই) নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌরাস্তা এলাকায় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় চৌরাস্তার চারপাশ ব্লক করে দিয়ে বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী বনি ইয়ামিন, রিয়াদুল জান্নাত মারিয়া, সালাউদ্দীন মহসীনসহ অনেকেই বক্তব্য দেন।
বক্তারা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারে কোনো কালক্ষেপণ করা যাবে না। প্রশাসনকে ২৪ এর জুলাইয়ের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। শিক্ষার্থীদের ওপর আঘাত আসলে আর কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে দোষীরা আইনের আওতায় না আসলে নোয়াখালীর ডিসি ও এসপি অফিস ঘেরাও করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
বেগমগঞ্জের চৌরাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ
বক্তারা আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চুড়ি পরে বসে থাকার জন্য রাষ্ট্র বেতন দেয় না। যদি আপনারা ব্যর্থ হন তাহলে ছাত্র-জনতা বাকিটা দেখে নেবে। এর আগেও আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তখন আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। আমরা আজকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই আপনাদের এ সন্ত্রাসী হামলার বিচার করতে হবে।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য আমি নোয়াখালীর ডিসি ও এসপির সাথে সর্বদা যোগাযোগ চলমান রেখেছি। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করা হবে বলে তারা আমাকে জানিয়েছেন। আমি আমার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় নোয়াখালীর সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
বেগমগঞ্জ মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে, দ্রুতই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী অনিমেষ দেবনাথ এবং তার দুই সহপাঠী গতকাল চট্টগ্রামের একে খান এলাকা থেকে বাঁধন প্লাস পরিবহনের একটি বাসে করে নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় পৌর হাজীপুর এলাকায় পৌঁছালে বাসে পূর্ব থেকে অবস্থান করা তিনজনযাত্রীসহ অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জন দুর্বৃত্ত তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা অনিমেষের গলা চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা করে এবং তাকে ও তার দুই সহপাঠীকে কিল, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর করে।
এতে অনিমেষের মাথা, কানের পাশে ও ডান বাহুতে গুরুতর জখম হয়। অপর শিক্ষার্থীদের শরীরেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হামলাকারীরা অনিমেষের পকেট থেকে ছয় হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং মোবাইলে ছবি তুললে তা মুছে ফেলে ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে আহতদের বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, এ ধরনের হামলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং ক্যাম্পাসে ফেরার পথে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।