স্বচ্ছ ও ফ্যাসিবাদমুক্ত রাজনীতির আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামীর রাজনীতি যেন আবার ফ্যাসিবাদের জন্ম না দেয়। বরং জনপ্রত্যাশা যেন পূরণ হয়। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দল যারা আছে তারা যেন সত্যিকার অর্থে মুখে যেভাবে বলেন সেভাবে দলের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও জাতির স্বার্থকে যেন আমরা সবাই দেখতে পারি।
শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য মরহুম দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিবের বাসায় পরিবারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও কবর জিয়ারত শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির প্রথমে শহরের শাহ মোস্তফা রোডস্থ দেওয়ান মঞ্জিলে মরহুম সিরাজুল ইসলাম মতলিবের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজখবর নেন। মরহুমের ১০ সন্তানের ৯ জন প্রবাসী। বাবার মৃত্যুতে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে দেশে এসেছেন। মরহুমের বড় ছেলে দেওয়ান শরীফুজ্জামান, দেওয়ান কামরুজ্জামান শিবলী, দেওয়ান মাশকুরুজ্জামান, দেওয়ান মুয়াজ উজ্জামানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী, সাবেক জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য আব্দুল মান্নান, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলীসহ জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আবেগঘন সাক্ষাৎ শেষে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান মরহুম দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিবের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার গিয়াস নগর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে যান। সেখানে মরহুমের কবর জিয়ারত করে উপস্থিত শত শত মানুষদের নিয়ে দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিবের স্মৃতিচারণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোনাজাত পরিচালনা করেন।
এরপর জামায়াতের আমির কুলাউড়ায় হত্যাকাণ্ডের শিকার উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের নাফিসা জান্নাত আনজুমের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় আবেগঘন বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমার নিজ উপজেলায় নাফিসা জান্নাত আনজুম হত্যার মর্মান্তিক সংবাদ ঢাকা থেকে শুনতে পেয়েছি। এ খবর শুনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। আজ আমি দুটি কারণে মেয়েটির বাড়িতে উপস্থিত হয়েছি, প্রথমতো মেয়েটির কবর জিয়ারত করা এবং তার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করা। আমি মেয়েটির বাবার সাথে আলাপ করেছি, উনার কথা শুনে আমার বিবেকে আঘাত লেগেছে, এ নির্মম হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে আমরা কোন সমাজে বাস করছি? এই নিষ্পাপ মেয়েটিকে হত্যা করে তার পরিবারের ওপর যে জুলুম করা হলো, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। নাফিসা জান্নাত আনজুমের খুনিকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে জনগণ সহ্য করবে না।
এ সময় বাড়ির আঙ্গিনায় এলাকার শত শত মানুষের উপস্থিতিতে উচ্চকণ্ঠে জনতা স্লোগান দেয় আনজুম হত্যাকারীর ফাঁসি চাই, দিতে হবে। প্রতিবাদী জনতাকে সান্ত্বনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা এ নির্মম হত্যার বিচার চাই। আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করছি, এ মামলাটিকে প্রভাবিত করার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল জালিমের পক্ষ নিয়েছে, যদি তাই হয় আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের নিয়ে আমরা জালেমের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আমার কথা হয়েছে, আমি স্পষ্টভাবে তাদের বলেছি এই খুনিকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে এদিকওদিক করলে তা সহ্য করা হবে না।
তিনি প্রশাসনের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, পুলিশের কলম যেন ন্যায়ের পক্ষে থাকে, মামলার আইও যাকে নিয়োগ করবে সেই তদন্তকারী কর্মকর্তা যেন কোনো নয়-ছয় না করেন। এই মজলুম পরিবারকে সহযোগিতা করলে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ সাধিত হবে।
এ সময় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াত আমিরকে বর্তমান রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, এই মেয়ে যদি আমার মেয়ে হতো তাহলে আমার কেমন লাগত। প্লিজ ভাই আজকে আপনারা সেক্রিফাইস করেন। আমি আজকে কোনো রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি না বলে দুঃখিত।
জামায়াত আমির আনজুমের বাড়ির পাশে দাউদপুর জামে মসজিদের পশ্চিমে অবস্থিত কবরস্থানে গিয়ে উপস্থিত সকলকে নিয়ে কবর জিয়ারত করেন ও মোনাজাত পরিচালনা করেন। মরহুমার ঘরে গিয়ে বাবা খালিক মিয়া, ছোট ভাই ও শিশু বোনটিকে সান্ত্বনা দেন। পর্দার আড়াল থেকে আঞ্জুমের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়ের হত্যাকারীর বিচার দাবি করেন ও মেয়ের জন্য দোয়ার আহ্বান জানান।
কেকে/এএম