দেশের তিন জেলার সীমান্ত দিয়ে আরো নারী-শিশুসহ ৩২ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তাদের পুশইন করা হয়। এর মধ্যে মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে ১২ জন, ঠকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন এবং দিনাজপুরের বিরল সীমান্ত দিয়ে ৭ জনকে পুশইন করা হয়।
এদিকে নতুন পদ্ধতিতে পুশইন করা হবে বলে জানিয়েছেন আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশে যেসব মানুষকে পুশইন করে দেওয়া হচ্ছে, তার পদ্ধতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে তার সরকার। তিনি বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কোনো বিদেশিকে চিহ্নিত বা প্রত্যর্পণ করতে প্রতিবার আদালতের অনুমোদন নিতে আসাম সরকার আইনত বাধ্য নয়। একটি পুরনো আইনি বিধি আছে- ‘অভিবাসী (আসাম থেকে বহিষ্কার) নির্দেশ, ১৯৫০’, এটা এখনও বলবত আছে। হিমন্তের ব্যাখ্যা, এই আইন অনুযায়ী, জেলা কমিশনারদেরই অধিকার আছে আদালতে না গিয়েও বহিষ্কারের নির্দেশ দিতে পারেন, সেটা সুপ্রিম কোর্ট পুনর্ব্যক্ত করেছে। তিনি বলেন, ‘কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমাদের আইনি পরামর্শদাতারা আগে এ ব্যাপারটা আমাদের জানাননি, আমরাও এটির ব্যবহারের সম্বন্ধে জানতাম না। এখন থেকে কাউকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হলে তাদের যে ট্রাইব্যুনালে পাঠাতেই হবে, তেমন নয়। যেসব মামলা কোনো আদালতে নেই, সেসব ক্ষেত্রে আমরা পুশইন করে দেব। নতুন পদ্ধতিতে পুশইন জন্য গত কয়েকদিন ধরেই প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মানুষকে পুশইন করা হয়েছে এটা আরও বাড়বে।
জানা গেছে, মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে ৪ শিশুসহ ১২ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার আনন্দবাস সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিরা সবাই বাংলাদেশি। তারা হলেন জাহাঙ্গীর আলম (৪২), শাহাজাদি খাতুন (৩০), লাভলী খাতুন (৪২), হাসেন আলী (১৮), জান্নাতি খাতুন (২০), বাবলু হোসেন (২৪), জেসমিন খাতুন (২০), ইয়াসিন হোসেন (২৫) এবং ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর, ৩ বছর, ১ বছর ও ১০ দিন বয়সী তিন শিশু। তাদের সবার বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িয়া উপজেলায়।
বিজিবির মুজিবনগর উপজেলা ক্যাম্প জানায়, গতকাল ভোরে উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের সীমান্তে টহল দিচ্ছিল বিজিবির একটি দল। তখন তারা সীমান্তের ৯৭/১ নম্বর পিলারের কাছে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে। পরে তাদের আটক করে ক্যাম্পে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, তারা সবাই বাংলাদেশি। বিভিন্ন সময় তারা অবৈধভাবে ভারতে গিয়েছিলেন। সেখানকার পুলিশ তাদের আটক করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। পরে গতকাল ভোরে বিএসএফ আনন্দবাস গ্রামের সীমান্তে এনে কাঁটাতারের ফটক খুলে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের পর আটক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাদের বাড়ি উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়িয়া থানায়। তাদের নামে মুজিবনগর থানায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করা হবে।
এর আগে গত ২৭ মে মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে ৩০ জনকে, ২০ মে উপজেলার সোনাপুর সীমান্ত দিয়ে ১৯ জন এবং ৪ মে ভবেরপাড়া সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ।
এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার চান্দুরিয়া ও দিনাজপুরের বিরল উপজেলার এনায়েতপুর সীমান্ত এলাকায় নারী ও শিশুসহ ২০ জনকে আটক করেছে বিজিবি। বিএসএফ তাদের সীমান্তে একত্র করে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি। গত সোমবার রাতে তাদের আটক করা হয়।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে পীরগঞ্জ উপজেলার চান্দুরিয়া সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে সাতজনকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন পুরুষ, দুজন নারী ও তিনটি শিশু আছে। আটকের পরে তাদের বিজিবির চান্দুরিয়া ক্যাম্পে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে সীমান্তে সাতজন বাংলাদেশি আটকের খবর পেয়েছি। তবে বিজিবি তাদের এখনো হস্তান্তর করেনি।’
এদিকে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার এনায়েতপুর সীমান্তে ১৩ জনকে ঠেলে দেয় বিএসএফ। পরে বিজিবি তাদের আটক করে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন পুরুষ, দুজন নারী ও নয়টি শিশু আছে। বিজিবি দিনাজপুর ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মঈন হাসান বলেন, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার এনায়েতপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার চান্দুরিয়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে ২০ জনকে ভারত থেকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভিন্ন সময় কাজের সন্ধানে অবৈধ পথে ভারতে অবস্থান করছিলেন বলে জানিয়েছেন। বিস্তারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।
কেকে/এআর