অবিরাম বর্ষণে ব্যাহত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার কোরবানির পশুর হাট। প্রতিবছর কোরবানে প্রায় দুই সাপ্তাহ পূর্ব থেকে লোহাগাড়ার বিভিন্ন হাটে জমে ওঠে কোরবানি পশু বেচাকেনার ধুমধাম। অল্প ক’দিন পরে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল-আজহা। কিন্তু অবিরাম বর্ষণে ব্যাহত হয়ে পড়েছে উপজেলার কোরবানির পশুর হাট বাজারগুলো।
পশু কোরবানি দেওয়ার জন্য সঙ্গতিসম্পন্ন পরিবারের লোকজন ছুটছেন হাট-বাজারে কোরবানি পশু ক্রয় করার জন্য। আবার বিক্রেতারা গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া সন্তোষজনক মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশায় ভিন্ন-ভিন্ন আঙ্গিকে পশুদের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। মোটা-তাজাকরণসহ সব ধরণের পরিচর্যা কাজে ব্যস্ত বিক্রেতারা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গৃহপালিত পশু বিক্রেতার সংখ্যা ও উল্লেখযোগ্য। আবার পাশাপাশি রয়েছেন কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী যারা বিভিন্ন এলাকা থেকে পশু ক্রয় করে এনে মুনাফা লাভের আশায় স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করেন।
অত্র উপজেলার স্থায়ী হাট-বাজার ছাড়া ও কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য কোন কোন এলাকায় অস্থায়ী পশুর হাট-বাজার বসে। এরমধ্যে গৃহপালিত পশু বেচাকেনার উল্লেখযোগ্য হল পদুয়া, দরবেশহাট ও চরম্বার গরুর হাট। আসন্ন ঈদুল-আযহাকে কেন্দ্র করে পূর্ব থেকেই এ হাটগুলোতে কোরবানি পশু বেচাকেনার জমজমাট ব্যবসা চলে। কিন্তু, চলমান বর্ষা মৌসুমে অবিরাম বর্ষণে হাটের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হয়ে পড়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা ও খুবই কম। উক্ত হাটগুলো পরিদর্শকালে এহেন চিত্র উক্ত প্রতিনিধির দৃষ্টিগোচর হয়। হাট-ব্যবস্থাপনা কমিটি হাট বসার জন্য জায়গা প্রস্তুত করেছেন পদুয়া হর্দ্দার মাঠ অর্থাৎ পদুয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, দরবেশ হাটে শাহপীর স্কুল মাঠ, চরম্বা গরুর হাট।
উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন ছাড়াও দূর-দূরান্তের আরো বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রেতারা গরু-ছাগল নিয়ে আসেন এই হাটে। স্থানীয় ছাড়াও দূর-দূরান্তের অসংখ্য ক্রেতা দেখাশুনা করে পছন্দের গরু-ছাগল ক্রয় করার সুযোগ পান। তবে, চলমান বর্ষা মৌসুমে হাটের পশু বেচাকেনার স্থানটি কাদা মাটিতে সয়লাব। যে কারণে ক্রেতা-বিক্রেতারা উভয়ই দূর্ভোগের সম্মুখীন হয়েছেন।
পরিদর্শনকালে আরো দেখা গেছে, ছোট, মাঝারী ও বড় আকারের অসংখ্য গরু-ছাগল, ভেড়া ও মহিষ বিক্রি করার জন্য হাটে নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা। মূল্য সম্পর্কে জানার জন্য কোন কোন বিক্রেতাদের সাথে আলাপ করলে তাঁরা জানান, মাঝারী আকৃতির একটি গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা এবং বৃহদকারের গরুর দাম দেড় ১ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত এবং ছোট আকারের গরুর দাম ৬৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ধার্য করা হয়েছে। তবে, কয়েকটি বিদেশী গরুর দাম বলেছেন বিক্রেতারা সাড়ে ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত। মাঝারি আকারের মহিষের মূল্য সোয়া ১ লাখ থেকে দেড়লাখ টাকা পর্যন্ত বাজার ধর দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশ জানান, উপজেলার পশুর হাটগুলোতে বিদেশী জাতের গরুর চেয়ে দেশীয় গরুর চাহিদা বেশী। কোন হাট-বাজারে যেন রুগ্ম ও কৃত্রিম উপায়ে মোটা-তাজা করা গরু-ছাগল বিক্রি না হয় তার জন্য তাঁর দপ্তরের একাধিক মোবাইল টিম পৃথক পৃথকভাবে হাটগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আরো বলেন, খামারিদের গরু-ছাগলের চেয়ে গৃহপালিত পশুর প্রতি নজর বেশি ক্রেতাদের।
একই প্রসঙ্গে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আরিফুর রহমান জানান, উপজেলার ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে আয়োজিত পশু বেচাকেনার হাট-বাজারের প্রতি প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রয়েছে। হাট-বাজারের সুন্দর পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রশাসন সার্বক্ষণিক সতর্ক রয়েছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে অবৈধভাবে সুবিধা গ্রহণ করতে কাকেও সুযোগ দেওয়া হবেনা। থানা পুলিশের টিম হাট-বাজারে অবস্থান নিয়ে জনগণের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
কেকে/এআর