বনভূমি ও টিলায় বেষ্টিত চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ফারাঙ্গা এলাকা। এলাকার মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে জনবসতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তৎসংলগ্ন রয়েছে গভীর ঝোঁপঝাড়বেষ্টিত মন্ডুলার চর নামক বনাঞ্চল। টিলা ও বনভূমিতে রয়েছে ফলদ ও বনজ বৃক্ষের বাগানসমূহ।
প্রকৃতিপ্রেমিক উক্ত ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ফারাঙ্গা নিবাসী আলহাজ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৯৬ সালে মন্ডুলার চরের নিজ দখলীয় বনভূমির প্রায় ১০ একর আয়তনবিশিষ্ট জায়গা সংস্কার করে আম ও লিচু বাগান গড়ে তুলেন। শুরুতেই তিনি উন্নত জাতের আম্রপালি, মল্লিকা, রূপালী, ফজলি ও হিমসাগর প্রভৃতি জাতের প্রায় ৭ শতাধিক আম চারা এবং দেশীয় জাতের প্রায় ৩ শতাধিক লিচু চারা রোপণ করেছিলেন। গত ২৭ মে ওই এলাকা পরিদর্শনকালে একান্ত এক সাক্ষাৎকারে আলহাজ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার বাগান সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বনভূমি সংস্কার করে আম ও লিচু বাগান করা কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল ব্যাপার। এতে লাভবান হওয়ার বিষয়টি ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল এবং পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বও অপরিসীম। সঠিক পরিচর্যা, সময়মতো পানি সেচ ব্যবস্থা, কীটনাশক প্রয়োগ ও স্প্রে করার মাধ্যমে বাগানের আম-লিচুর চারা পরিচর্যা করতে হয়। বাগান সৃষ্টি করার পর থেকে এ পর্যন্ত গভীর নলকূপ বসিয়ে পানি সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণসহ অন্যান্য পরিচর্যা বাবদ তাঁর বহু টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে ফলন হওয়ার পরও তিনি এ যাবৎ তিন বছরে আম ও লিচু বিক্রি করে তেমন লাভবান হননি। সেচ ব্যবস্থা সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য তাঁকে গভীর নলকূপ বসাতে হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত ব্যয়বহুল স্প্রে করাও কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
এ ছাড়া রয়েছে পরিচর্যাকারী শ্রমিকদের পারিশ্রমিক। সবকিছু মিলে লাভের চেয়ে ব্যয়ের ভাগ বেশি হয়। তিনি আরো বলেন, গত বছরে তাঁর ব্যয় হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। কিন্তু আম ও লিচু বিক্রি করে তিনি আয় করেছেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। বিশেষ করে সঠিক সময়ে বৃষ্টি হলে ফলন ভালো হয়। আর যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে আমের মুকুল ঝরে পড়ে যায়। এতে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। আর দৈবাৎ যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে, তাহলে পুরো বাগানটি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও বৃদ্ধি পায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আলহাজ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, তিনি শখের বশে এ বাগানটি সৃষ্টি করেছেন। যদিও আর্থিকভাবে তিনি লাভবান হতে পারেননি, এরপরও একজন প্রকৃতি প্রেমিক হিসেবে মানসিকভাবে প্রশান্তি লাভ করে যাচ্ছেন। এ বছরের ফলন নিয়ে তিনি এক প্রকার হতাশ। যেহেতু সময়মতো বৃষ্টি হয়নি, সেহেতু ফলনও হওয়ার সম্ভবনা কম। বৃষ্টি না হওয়ায় আম ও লিচু গাছের মুকুলগুলো ঝড়ে পড়েছে। সঠিকভাবে অন্যান্য পরিচর্যা চললেও ফলন হওয়াতে বৃষ্টির পানি অপরিহার্য। তাই এবারের ফলন নিয়ে শুধু তিনি নন, অন্যান্য বাগান মালিকেরাও এক প্রকার হতাশাগ্রস্ত।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কাজী শফিউল ইসলাম জানান, এ বছর উপজেলার সমতল ও বনভূমিতে প্রায় ১ শত ৫০ হেক্টর জায়গায় আম চাষ এবং ১৬ হেক্টর জায়গায় লিচু চাষ হয়েছে। তবে যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় সঠিক ফলন পাওয়ার আশা ক্ষীণ। লিচু চাষের মধ্যে বোম্বাই, চায়না-৩ ও স্থানীয় জাতের লিচু গাছ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কেকে/এএম