বুধবার, ২১ মে ২০২৫,
৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বাংলা English

বুধবার, ২১ মে ২০২৫
শিরোনাম: গণঅভ্যুত্থানের দশমাসেও জনজীবনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা আসেনি: সাইফুল হক      স্কুল-কলেজে ফিরে এসেছে পুরনো শপথবাক্য      ‘২৮ মের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না হলে জেলে যেতে হবে’      মবের চাপে প্রশাসন      এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে অসহযোগ কর্মসূচির ঘোষণা      ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথের আদেশ আগামীকাল      নগর ভবন ছেড়ে মৎস্য ভবন মোড়ে ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান      
খোলাকাগজ স্পেশাল
মবের চাপে প্রশাসন
শিপার মাহমুদ
প্রকাশ: বুধবার, ২১ মে, ২০২৫, ৩:৩২ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ ই-পেপার থেকে।

ছবি : খোলা কাগজ ই-পেপার থেকে।

গণঅভ্যুত্থানের ৯ মাস পার হলেও এখনো বন্ধ হয়নি ‘মবকাণ্ড’। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বারবার হুঁশিয়ারি দিলেও বাস্তবতা বলছে, প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে এসব অপরাধ। আর এসব ঘটনা থেকে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রেহাই পাচ্ছে না খোদ পুলিশ সদস্যরাও। তথ্য বলছে, প্রতিদিন গড়ে পুলিশের বিরুদ্ধেই হচ্ছে একটি মব। এর মধ্যে গত এপ্রিলে পুলিশের সঙ্গে ৩৭টি মব হয়েছে, মার্চে ৩৫টি। বেশিরভাগ ঘটনাতেই দেখা গেছে, পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করলে একদল মানুষ সংগঠিত হয়ে হামলা চালায় এবং আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কখনো তা হয়ে উঠছে সফল, কখনো পরিস্থিতি রূপ নিচ্ছে সংঘর্ষে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা হয়েছে ২২৫টি, যার মধ্যে ৭০টি ছিল গুরুতর ধরনের। সেপ্টেম্বরে ২৪টি, অক্টোবরে ৩৪টি, নভেম্বরে ৪৯টি, ডিসেম্বরে ৪৩টি, জানুয়ারিতে ৩৮টি এবং ফেব্রুয়ারিতে ৩৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই পরিসংখ্যানের বাইরেও রয়েছে রাস্তাঘাটে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, হুমকি ও ধাক্কাধাক্কির অসংখ্য ঘটনা। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংঘবদ্ধ মব হামলা চালাচ্ছে। কখনো অপরাধী চক্র, কখনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও এসব মবকাণ্ডে ভূমিকা রাখছে। শুধু পুলিশের ওপর নয়, কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষও এই মবের শিকার হচ্ছেন।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) জানায়, ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গণপিটুনিতে অন্তত ১১৯ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছেন। গত ১০ বছরে গণপিটুনিতে মারা গেছেন ৭৯২ জন, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২০২৪ সালে মোট ১৭৯ জন।

সর্বশেষ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে হাক্কানী পাবলিশার্সের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে গ্রেফতারে চাপ দিতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান তিন তরুণ। এদের মধ্যে একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বি। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণ ধানমন্ডি থানার ওসিকে উদ্দেশ করে বলেন ‘আপনি গ্রেফতার করলেন না কেন? আমি বলছি আপনি গ্রেফতার করেন।’ বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওই তিন তরুণকে হেফাজতে নেওয়া হয়। পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন এবং এনসিপি নেতা হান্নান মাসুদের উপস্থিতিতে তাদের পরিবারের জিম্মায় মুচলেকায় ছেড়ে দেয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে সাইফুল ইসলাম রাব্বিকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা নিয়েও শুরু হয়েছে সমালোচনা।

ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈনু গণমাধ্যমকে বলেন, একজন প্রকাশককে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে মবের চেষ্টা করা হয়। কিছু লোক জোর করে বাসায় প্রবেশের চেষ্টাও করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। আমি নিজেও সেখানে ছিলাম। পরে ওই ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে ওই প্রকাশককে গ্রেফতার করতে বলেন। কিন্তু ওই প্রকাশকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ কারণে তাকে গ্রেফতারে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা খারাপ আচরণ করেন। এ সময় তিনি জানান, ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হান্নান মাসুদসহ কয়েকজনের উপস্থিতিতে পরিবারের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে ওই তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ধানমন্ডিতে মবকাণ্ডের পর এনসিপি নেতার ভূমিকায় থানা থেকে ৩ তরুণকে ছাড়িয়ে আনা; মবকে উৎসাহিত করছেন কি না, এটি নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের ভাষ্য, সংঘবদ্ধ এসব কর্মকাণ্ডের কারণে আইন রক্ষাকারীরাও হয়ে আছেন কোণঠাসা।
এ বিষয়ে কথা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান শাহারিয়া আফরিন খোলা কাগজকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক মবকাণ্ড উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার আইনি কোনো ভিত্তি নাই। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে কোথাও অনুমতি ছাড়া এসব কর্মকাণ্ড করাকে সমর্থন করা যায় না। যেহেতু দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও অবনতি দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে আবার পুলিশ সদস্যরা নিজেই মবের শিকার হচ্ছেন। ফলে সব মিলিয়ে তারা চাইলেও সঠিক কাজ করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ যে স্বপ্রণোদিত হয়ে মব ঠেকাতে যাবে, সেটাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর এ কারণেই এসব ঘটনা আরো ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

তিনি বলেন, এসব ঘটনা সংগঠিত হওয়ার ফলে অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। সেটা হলো মব তৈরি করে অনেকেই বাড়ি-ঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠার ভাঙচুর ও লুটপাট করছে। যেটা গত কয়েকদিন ধরে দেখে আসছি। বিশেষ করে গতকাল ধানমন্ডিতে যে ঘটনা ঘটলো, সেখানেও এমন কিছু ঘটতে পারত। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠিন ভূমিকার কারণে তা হয়নি।

ধানমণ্ডিতে ঘটে যাওয়া ঘটনা উল্লেখ করে শাহারিয়া আফরিন বলেন, ‘মানুষ কখন ক্রাইম করে, যখন বুঝতে পারে আমি ক্রাইম করে বেঁচে যাব। তখনই সে ধারাবাহিক ক্রাইম করতে থাকে। আর এমনই একটি ঘটনার উদাহরণ হলো ধানমন্ডির ঘটনাটি। মব সৃষ্টির অপরাধে যখন তিন তরুণকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হলো, তাদের দেখলাম এনসিপির একজন নেতা ছাড়িয়ে আনল। এই যে ঘটনা ঘটল, এটা কী বিচার হলো? তারা তো রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে বেঁচে গেল। যা মবকে আরো উৎসাহিত করা হয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার কল দিলে ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এনসিপি কিংবা বৈষম্যবিরোধীদের কোনো কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি কথা বলবেন না। এসবের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

কেকে/এএস
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে যমুনার সামনে ইশরাক
১০০ বিলিয়ন ডলারের আরএমজি লক্ষ্যে ঐক্য চায় সম্মিলিত পরিষদ
জুনে ৩০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে রিজার্ভ
কাপাসিয়ায় মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন
ঢাকাস্থ লাখাই উপজেলা উলামা পরিষদের আত্মপ্রকাশ

সর্বাধিক পঠিত

গজারিয়ায় অবৈধ বালুমহালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান, অস্ত্র-গুলি উদ্ধার
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ কনস্টেবলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের এক মাস পর সাত সহকর্মীর নামে মামলা
বাঞ্ছারামপুরে নামে ৫০ শয্যা, কাজে ৩১ শয্যার সরকারি হাসপাতাল চলছে খুঁড়িয়ে
বাউফলের প্রধান শিক্ষক সোহেল মল্লিকের যত অপকর্ম
কালীগঞ্জে গ্রাম আদালতবিষয়ক ২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ শুরু
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close