কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের নজরুল হলে শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য গরু আনা কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করে উৎসব মুখর পরিবেশ।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে গরুটি হলে আনার পরপরই শিক্ষার্থীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে এবং এক আনন্দ মিছিল বের করে কলেজ ক্যাম্পাস জুড়ে।
গরুটি হলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীরা তাকে ফুলের মালা পরিয়ে স্বাগত জানায়। এরপর নজরুল হল থেকে একটি বর্ণাঢ্য মিছিল বের হয়, যা কলেজের মূল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে শিক্ষার্থীরা নানা রকম স্লোগান দিয়ে পুরো ক্যাম্পাসে উৎসবের আবহ তৈরি করে।
মিছিলটি কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত আবাসিক হল নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের সামনে গিয়ে থামে। সেখানেও শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে আনন্দ ভাগ করে নেয়।
চলতি মাসের মিল ম্যানেজার ও ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল কাহহার বলেন, এই দায়িত্ব শুধু দায়িত্ব নয়, বরং সহপাঠীদের সেবা করার একটি বড় সুযোগ। এত শিক্ষার্থীর খাবারের ব্যবস্থাপনা যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনি আনন্দেরও। গরু আনার মতো একটি পদক্ষেপ নিতে পেরে আমি গর্বিত। এটি আমার ছাত্রজীবনের এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
নজরুল হলের বিদায়ী শিক্ষার্থী ও মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র মো. তুষার আহমেদ বলেন, অনেকদিন পর হলে পুরনো ঐতিহ্য ফিরে এসেছে। আগে শুনেছি সিনিয়ররা মাঝে মাঝে হলে গরু আনতেন, আজ সেই ঐতিহ্য নতুন করে ফিরে এসেছে। বর্তমান মাসের ম্যাস কমিটিকে এ জন্য ধন্যবাদ জানাই।
গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান শাওন বলেন, আমি প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই হলে অবস্থান করছি, কিন্তু এর আগে কোনো ম্যাস কমিটির এমন উদ্যোগ দেখিনি। পুরো একটি গরু আনা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী এবং প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত। আমি আশা করি, এ ধারা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে।”
আবাসিক শিক্ষার্থী মো. আরমান হোসেন বলেন, আজ হলে জবাই হবে ‘স্বৈরাচার’ নামক গরুটি। এটি শুধু একটি গরু নয়, এক ধরনের প্রতীকী প্রতিবাদ এবং একতাবদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। এই দিনটি নজরুল হলের শিক্ষার্থীদের মনে দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
গরু আনা ও তা ঘিরে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নজরুল হলকে পরিণত করেছে এক প্রাণবন্ত মিলনমেলায়। শিক্ষার্থীদের মুখে হাসি এবং প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে ওঠে পুরো আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস এলাকা।
পুরনো ঐতিহ্যকে নতুনভাবে ফিরে পেয়ে শিক্ষার্থীরা যেন তাদের হল জীবনের এক বিশেষ দিন উপভোগ করলো। ‘স্বৈরাচার’ নামের গরুটি হয়ে উঠেছে কেবল খাবারের উৎস নয়, বরং আনন্দ, ঐতিহ্য এবং প্রতিবাদের এক প্রতীক।
কেকে/এআর