সাতক্ষীরা বাজারে শুধু আম আর আম। গোবিন্দভোগ ও গোলাপখাস আমে সয়লাব হয়ে গেছে বাজার। চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আম বাজারে ওঠায় দাম পড়ে গেছে। ফলে আমচাষিরা বিপাকে পড়েছেন। একদিকে মূল্য পাচ্ছেন না, অন্যদিকে প্রচণ্ড গরমে দ্রুত পেকে আম নষ্ট হচ্ছে। পাকতে শুরু করায় চাষিরা হিমসাগর ও ন্যাংড়া আম সংগ্রহের নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন।
গত ৩০ এপ্রিল জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ সভায় আম পাড়ার ক্যালেন্ডার চূড়ান্ত করা হয়। সেই অনুযায়ী ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও বৈশাখীসহ স্থানীয় জাতের আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করা শুরু হয়েছে। তবে হিমসাগর আম বাজারে আসবে ২০ মে, ল্যাংড়া ২৭ মে এবং আম্রপালি ও মল্লিকা ৫ জুন থেকে পাওয়া যাবে।
আমচাষিরা বলছেন, জেলার ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টরের ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার আম বাগানের মধ্যে অর্ধেক জমিতে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও বৈশাখীসহ স্থানীয় জাতের আম উৎপাদন হয়। ১৫ দিন এ আম বাজারে থাকে। তারপর ২০ মে থেকে হিমসাগর আম বাজারে এলে অন্য আমের চাহিদা থাকে না। মূল্যও স্বাভাবিকভাবে আরও কমে যায়। চলতি মৌসুমে এ সময় প্রচণ্ড গরম পড়ায় আম দ্রুত পেকে যাচ্ছে। এসব আম সংরক্ষণে হিমাগারের ব্যবস্থা না থাকায় লোকসান করেও আম বিক্রি করে ফেলছেন।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এক সপ্তাহ ধরে জেলায় তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। ২০২৪ সালের এ সময় তাপমাত্রা ছিল ৩০ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
সাতক্ষীরা শহরের বড় বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকশ ভ্যান ও পিকআপে গোবিন্দভোগ এবং গোলাপখাস আম নিয়ে আসা হয়েছে। সরবরাহ বেশি হওয়ায় অনেকে আম নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
তালা উপজেলার নওয়াপাড়া এলাকার আমচাষি আব্দুল আলিম জানান, তীব্র তাপপ্রবাহে আম পেকে যাচ্ছে। বাজারে চাহিদার চেয়ে আম উঠছে অনেক বেশি। ফলে তারা এ সময় যে আম মণপ্রতি ২২০০-২৮০০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন, এবার সেই আম বিক্রি করছে ১৮০০-২০০০টাকা মণ দরে। তাদের সব খরচ-খরচা বাদ দিয়ে আম চাষে লাভ হচ্ছে না।
ফিংড়ি এলাকার আমচাষি আনিসুর রহমান জানান, বাজারে গোবিন্দভোগ কিংবা গোলাপখাসের চাহিদা কম। অথচ আমে বাজারে সয়লাব। বাইরের ক্রেতারা অপেক্ষায় আছেন হিমসাগর আমের জন্য। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী হিমসাগর আম আর এক সপ্তাহ পরে ২০ মে পাড়া শুরু হবে। তিনি দাবি করেন ইতোমধ্যে হিমসাগর আম পাকতে শুরু করেছে। হিমসাগর আম পাড়ার তারিখ এগিয়ে ১৫ মে করা হোক। তাপদাহে আম পেকে যাচ্ছে। নেই আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা।
তবে গোবিন্দভোগ ও গোলাপখাস আম ১৮০০-২২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারলে চাষিরা লোকসানে পড়বেন না বলে মনে করেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুচারটে হিমসাগর আম পাকলেও সংগ্রহের তারিখ এগিয়ে নিয়ে এলে গোবিন্দভোগ ও গোলাপখাসসহ দেশীয় জাতের আমের বাজারদর আরও কবে যাবে।
সাতক্ষীরা বড় বাজার কাঁচাবাজার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রওশন আলী বলেন, প্রতিদিন সকালে বাজারে আমে সয়লাব হয়ে যায়। কিন্তু ক্রেতা নেই। বাধ্য হয়ে অপেক্ষাকৃত কম মূলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা আম বিক্রি করছেন। তিনি দাবি করেন, গোবিন্দভোগ ও গোলাপখাস দেশীয় জাতের আম আরও অনন্ত এক সপ্তাহ আগে পাড়া শুরু করলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে, যেখানে ১৩ হাজার ১০০ কৃষক জড়িত। এবার ৭০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। চাষিরা ৪০০ কোটি টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তারা।
কেকে/এএস