গ্রামীণ পরিবেশ, একটি সাধারণ ঘর, পাখির ডাক, সকালে সূর্যের আলো একই ছাদের নিচে বাস করেন ছয় ভাই আর এক বোন। তাদের মধ্যে দুই ভাই ও এক মাত্র বোন তিনজনই প্রতিবন্ধী। তাদের চোখে কোনো বিলাসিতা নেই, নেই স্বপ্নের রঙিন পটভূমি। সকালের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় তাদের যুদ্ধ। আছে শুধু প্রতিদিনের কঠিন বাস্তবতা আর একটানা সংগ্রাম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর হটাৎপাড়া গ্রামের বাসেদ আলী পরিবারের একমাত্র উপার্জন করেন। তার বড় দুই ছেলে কিছুটা সংসারের হাল ধরেছে। এই পরিবারের দুই ভাই পুরোপুরি চলাফেরা করতে পারেন না, আর বোন হাঁটেন সহায়তায়। জন্ম থেকে কেউ প্রতিবন্ধী নয়, কেউ প্রায় তিন বছরে আবার কেউ ৫ বছর বয়সে হটাৎ অসুখ হলে, আসতে আসতে হতে থাকে শারীরিক অসুস্থ। তারপরে অনেক চিকিৎসা করার পরেও তারা ঠিক না হয়ে পুরোপুরি প্রতিবন্ধী হয়ে যাই। কিন্তু তাদের একমাত্র ছোট বোন সুস্থ হবে বলে চিকিৎসক জানান । কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারেননি। তিনিও আস্তে আস্তে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। তবে হেরে যাননি তারা। জীবন তাদের যতোই কঠিন করুক, তারা প্রতিদিন লড়ে যাচ্ছেন।
প্রতিবন্ধীর বাবা বলছেন, আমাদের বয়স হয়েছে। আমি এখন সঠিকভাবে উপার্জন করতে পারছি না। প্রতিবন্ধী দুই ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় ভুগছি। আমাদের একটি চাওয়া তাদের পাশে কেউ এসে দাঁড়ালে তারা নিশ্চিন্তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারবে।
প্রতিবন্ধীর মা বলছেন, ‘আমাদের বাড়ি ভাঙাচুরা আমরা কোনঠে থাকবো আব্বার বয়স হয়ে গেছে আমরা এখন চাইতে না গেলে আমাদেরকে কে খেতে দিবে। তাই আমরা চাইতে যাচ্ছি চেয়ে এনে গরু কিনব এবং দোকান দিবো দিয়ে দোকানে বসব।’
ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে দুই ছেলে এবং মেয়ে প্রতিবন্ধী তারা জন্মগত প্রতিবন্ধী ছিল না। প্রায় পাঁচ বছর বয়সে অসুস্থ হলে সুস্থ করার জন্য মাটি-জমি বিক্রি করে দেশসহ ভারতে চিকিৎসা করতে নিয়ে যান। কিন্তু তাদের কোনো কিছু ঠিক হয়নি তারা এখন টাকা পয়সা ও মটি-জমি শেষ করে নিঃস্ব হয়ে গেছে। চিকিৎসা নেই, নেই পর্যাপ্ত খাবার, এমনকি চলার মতো হুইলচেয়ারটাও ভেঙে গেছে। রাষ্ট্রের সহানুভূতি যেন এখনো পৌঁছায়নি এই দরজায়।
উপজেলা সমাজ সেবাকর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, তারা দুই ভাই প্রতিবন্ধী ভাতা পান এবং চম্পা খাতুন তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা আওতায় আছে কি না জানি না। তবে আমরা যাচাই বাছাই করে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় নিয়ে আসব। যদি উনি হুইলচেয়ারের আবেদন করেন তবে উনাকে হুইলচেয়ার দেওয়া হবে। মাহিদুর ও জামাল ভিক্ষায় নিয়োজিত থাকে তাহলে ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় যে সুযোগ-সুবিধাগুলো আসে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তাদের জীবনে নেই উৎসবের আনন্দ, নেই সামাজিক স্বীকৃতি। কিন্তু আছে এক অদম্য মনোবল। আজ যদি আমরা পাশে দাঁড়াই, হয়তো তারা খুঁজে পাবে আলোর পথ।
কেকে/এএস