ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পিনপিনের ছাও

মনিরা মিতা
🕐 ১:০৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০২১

পিনপিনের ছাও

তুলির পা দুটো এখন শক্ত হয়েছে, সে দৌড়াতে পারে। সারা বাড়িতে সে দৌড়ে বেড়ায়। উঠানে ঝরে পরা শুকনো পাতা যখন বাতাসে পাক খেয়ে পড়ে তখন তুলি হা করে দেখে। চড়ুই কিংবা শালিক যখন জানালার গ্রিলে বসে কিচিরমিচির করে তুলিও ওদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কিচকিচ শব্দ করে। তুলির অমন অদ্ভুত শব্দ শুনে পাখিরা ডাক থামিয়ে অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। জানালার গ্রিলের ফাঁক গলে রোদ এসে যখন বিছানায় পড়ে তখন তুলি রোদ ধরতে যায়। বিছানায় খামচি দিয়ে রোদ হাতের মুঠোয় বন্দি করে আবার খুলে দেখে রোদ কই! এভাবে অনেক্ষণ চলতে থাকে একসময় রোদ ধরতে না পেরে কান্না শুরু করে।

তুলিদের বাড়িতে একটা পোষা বেড়াল আছে। ওর নাম পিসু। তুলি ওকে দেখলেই ধরতে চায়। কখনো পিসুকে হাতে পেলে ওর লেজ ধরে টানে, ওর নরম শরীর খামচে ধরে। পিসু বিরক্ত হয়ে পালিয়ে যায়। কখনো তেলাপোকা দেখলে আর রক্ষা নাই, ওটার পিছু পিছু দৌড়ে বেড়ায়। বেচারা তেলাপোকা যেখানেই লুকায় তুলি সেখানে গিয়েই হামলা করে। ঘরের সব কিছু এলোমেলো করে একাকার করে ফেলে।

ছোট ছোট দাঁত দিয়ে হাতের কাছে যা পায় সব কামড়ায়।

এই তো সেদিন ওর বাবা ওকে সুন্দর একটা পুতুল কিনে দিল। দুই দিনের মধ্যে পুতুলটা কামড়ে-কুমড়ে, হাত-পা ভেঙে নাজেহাল করে ফেলল। তুলির বাবার পছন্দের একটা টেবিল ঘড়ি আছে। ওটার টিকটিক শব্দ শুনে বারবার ধরতে চায় তুলি। সেদিন দমকা বাতাসের ধাক্কায় ঘড়িটা নিচে পড়ে গেল। তুলি ওটা হাতে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও যখন ওটার টিকটিক শব্দের উৎস খুঁজে পেল না তখন রেগে মেগে আছড়ে ওটা ভেঙ্গেই ফেলল। তারপর রাগে জেদে চিৎকার শুরু করল। অবশেষে ওর মা এসে কোলে নিয়ে অনেক কষ্টে শান্ত করল।

ইদানিং তুলির কিন্তু একটা বন্ধু জুটেছে।

হাত-পা নেড়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় ওকে তুলি ‘পিনপিনের ছাও’ বলে ডাকে। পিনপিনের ছাও আসলে একটা মুরগির বাচ্চা। তুলি কেন আর কি করে ওকে এই নাম দিল তা কেবল ওই জানে। তবে পিনপিনের ছাও নাম শুনে তুলির বাবা-মা হেসেই খুন হয়।

কিছুদিন আগে একটা কাক তুলোর মতো তুলতুলে একটা মুরগির বাচ্চা এনে তুলিদের আম গাছের ডালে রাখে। তুলির মা এটা দেখেই কাকটাকে তাড়িয়ে দেয়। মুরগির বাচ্চাটা ততক্ষণে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ওর পা ভেঙে গেছে, ও চিঁউচিঁউ করে ডাকতে থাকে। তুলির মা সঙ্গে সঙ্গে মুরগির বাচ্চাটার ক্ষতস্থানে তেল-হলুদ লাগিয়ে দেয়। একসময় মুরগির বাচ্চা সুস্থ হয়। তুলি ওকে খুব পছন্দ করে, ওকে দেখলেই খুব খুশি হয়। তুলি ওকে আঘাত করে না, ওর সঙ্গে খেলা করে আর পিছু পিছু দৌড়ায়। একসময় পিনপিনের ছাও ক্লান্ত হয়ে দৌড় থামিয়ে তুলির গায়ে বসে। টুকটুক করে ঠোকর দিয়ে ওকে আদর করে, খুনসুটি করে। ওর ঠোকরে তুলি খিলখিল করে হাসে, ওর সঙ্গে হেসে ওঠে পুরো বাড়ি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper