ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

টোকা দিয়েছিল কে?

রাশেদ রউফ
🕐 ২:৫৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০১৯

এখনো পর্যন্ত ঘটনাটা আমাকে শিহরিত করে। রাত-বিরোতে মনে পড়লে আঁতকে উঠি। উহ্! কী শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি!

আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড ইয়ার অনার্সের ছাত্র। বাবার ব্যবসা মাঝিরঘাটে বলে বাসাটাও নেওয়া হয়েছে সেখানে। বাসায় আমি আর বাবা ছাড়া কেউ নেই। আমাদের পুরো ফ্লোরটাই ব্যাচেলর কোয়ার্টার। চারতলা বিশিষ্ট হাবিব সন্স বিল্ডিংয়ের চতুর্থতলায় আমরা থাকি। এ কোয়ার্টারে যারা থাকে, তাদের বেশিরভাগই লবণ ব্যবসায়ী অথবা লবণ মিলের মাঝি এবং প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবসায়ী। তারা তাদের কাজকর্ম, দোকানপাট বন্ধ করে বাসায় আসতে আসতে কমপক্ষে রাত ৯টা বেজে যায়। 

বরাবরের মতো ওইদিন সন্ধ্যায় সেই চারতলার ব্যাচেলর কোয়ার্টার আমি একা ছিলাম। পড়ালেখা করছি। আমার বাসায় দুটো জানালাই খোলা। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। অন্ধকার হয়ে গেল এলাকা।

আমি টেবিল হাতড়ে মোমবাতিটা খুঁজে পেলাম। কিন্তু দিয়াশলাই কই? টেবিলের ড্রয়ার, বুক সেলফ, বালিশের কাছে সব জায়গায় অন্ধকারের মধ্যে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু না, পেলাম না। কী করি এখন? চারতলায় আমি একা। অন্য সব কটি বাসায় তালা। কেউ আসেনি। তৃতীয়, দ্বিতীয় এবং নিচতলায় কেউ থাকার কথা নয়। তাহলে মোমবাতিটা কীভাবে জ্বালাই? নিচে নেমে যাব? খোয়াজদের দোকান থেকে মোমবাতিটা জ্বালিয়ে আনবো? নাকি একটা ম্যাচ কিনে আনবো? একবার ভাবি নিচে গিয়ে একটা ম্যাচ কিনে আনি। কিন্তু পরক্ষণেই আলস্য এসে চেপে ধরে। মনে হয়, এ বুঝি চলে এলো বিদ্যুৎ। শেষমেশ বিদ্যুতের অপেক্ষায় অন্ধকারে বসে আছি বাসায়। দখিনার জানালা দিয়ে দেখছি রাতের কর্ণফুলীকে। এ অন্ধকারেও অদ্ভুত লাগছে। হঠাৎ দরোজায় টোকা। কড়া নাড়ার আওয়াজ।
: কে? কে?
নীরবতা। কারও কোনো আওয়াজ নেই। সাড়া নেই। কিছুক্ষণ পর আবার কড়া নাড়ার শব্দ। চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম : কে?
না, কোনো উত্তর নেই। আবার দরোজায় টোকা। টক টক কিন্তু উত্তর পাচ্ছি না বলে দরোজা খুলছি না। একটু একটু ভয় পাচ্ছিলাম। কথার উত্তর দিচ্ছে না কেন? দখিনার জানালায় নদী দেখা গেলেও ভয়ে সেটি বন্ধ করে দিলাম। পশ্চিমের জানালা দিয়ে খোয়াজকে ডাকার চেষ্টা করি, হুজুরকে ডাকি। কিন্তু কেউ আমার কথা শোনে না। আমার ডাক কি তাদের কানে পৌঁছছে না? তাদের সব কথা তো আমি শুনতে পাচ্ছি। ওরা আমার ডাক শুনছে না? দরোজায় যে কড়া নাড়ছে, সে ভূত নয় তো? আমার শব্দগুলো সে খেয়ে ফেলছে না তো? না হয়, খোয়াজরা আমার ডাক শুনবে না কেন? ভয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে ভেতরটা। এমন সময় সিঁড়ি দিয়ে কে যেন ওপরে ওঠার শব্দ শুনছি। সেন্ডেলের আওয়াজ। কান খাড়া করে রাখলাম। দখিনার জানালার দিকে সিঁড়িটা। জানালাটা খোলা থাকলেও হয়তো অন্ধকারেও কে ওপরে উঠছে, তা দেখা যেত। কিন্তু বন্ধু জানালা খোলার সাহস পাচ্ছি না। এমন সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ফকফকা হয়ে যায় চারপাশ। বড় নিঃশ্বাস ফেলি আমি। আমার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়টার বুঝি অবসান হলো।

দখিনার জানালা খুলে দিলাম। আশপাশ দেখলাম। মন চাইছে, দরোজাটা খুলি। এতক্ষণ কড়া নেড়েছে কে, একটু দেখি। কিন্তু ভয় এখনো কাটেনি। মনকে বোঝালাম- ভূত-টুত বলে তো কিছুই নেই। মনে সাহস এনে দরোজা খুললাম। দরোজা খুলেই আমি এমন চিৎকার দিলাম, সেই চিৎকারে অজ্ঞান হয়ে যাই।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper