ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শিশু রফিকুলের দায়িত্ব নেবে না কেউ

অজানার উদ্দেশ্যে ট্রেনে তুলে দিলেন ভাই-ভাবি

রানীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
🕐 ৭:৪৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২১

অজানার উদ্দেশ্যে ট্রেনে তুলে দিলেন ভাই-ভাবি

মা-বাবা হারা ১০ বছরের শিশু রফিকুল যে বয়সে পড়াশোনা ও হেসে-খেলে বেড়ানোর কথা। সেই বয়সে তার ঠাঁই হয়নি আপন বড় ভাই ও ভাবির সংসারে। একরাশ দুঃখ ও কষ্ট নিয়ে পাড়ি জমাতে বাধ্য করা হয়েছে অজানার উদ্দেশ্যে। অনেক আকুতি মিনতি করা হলেও ভাই-ভাবির কঠিন অন্তর গলেনি। রক্তের বাঁধন যেন স্বার্থ হাসিলের মূল হাতিয়ার। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব না নিয়ে ১০ বছর বয়সী ছোট ভাইকে নিরুদ্দেশ পাঠিয়ে দিলেন তার আপন ভাই ও ভাবি। ‘আমরা তোকে আর রাখব না, তোর মন যেখানে যেতে চায় চলে যাবি’ এই বলে তাকে ট্রেনে তুলে দেন তারা।

ভুক্তভোগী শিশু রফিকুল ইসলামের বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে।

গত শনিবার রাতে তাকে রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যায়। গত রোববার স্থানীয় সোনার বাংলা সমাজ কল্যাণ ও ক্রীড়া সংসদের আহ্বায়ক এসএম হেলাল খন্দকার শিশুটিকে বালিয়াকান্দি ইউএনওর কাছে নিয়ে যান।

শিশু রফিকুল জানান, তার বয়স ১০ বছর। সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা-মা প্রায় এক বছর আগে মারা যান। তাদের মৃত্যুর পর থেকে একমাত্র আপন বড় ভাই শফিকুল ইসলামের কাছে থাকতাম। ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন এবং রানীনগরে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। হঠাৎ শনিবার আমার ভাই-ভাবি আর রাখতে পারবে না তাদের কাছে। এরপর রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেনে তুলে দেন আমাকে।

এসএম হেলাল খন্দকার জানান, গতকাল রাতে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেন চলে যাওয়ার পর স্টেশনে এলোমেলোভাবে ঘুরতে দেখে রফিকুলকে বাড়িতে নিয়ে যান এবং বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে রাতেই বিষয়টি স্থানীয় থানা পুলিশ ও ইউএনওর কাছে অবহিত করেন। পরে রফিকুলকে ইউএনওর কার্যালয়ে নিয়ে যান।

রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি ইউএনও আম্বিয়া সুলতানা বলেন, গত শনিবার রাতে স্টেশনে এক সমাজকর্মী একটি শিশুকে পেয়েছেন। শিশুটির দেওয়া তথ্যানুসারে নওগাঁর সংশ্লিষ্ট ইউএনওর সঙ্গে কথা হয়েছে।

রফিকুলের বড় ভাই শফিকুল বলেন, আমার ছোট ভাই উদাসীন টাইপের ছেলে তাকে এক দোকানে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু সে কাজ না করে ঘুরে বেড়াত। আমাদের অভাবের সংসার আমরা নিজেরাই চলতে পারি না। এতে তার দায়িত্ব নিতে পারব না। গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খাঁন হাসান জানান, শিশুটির মা-বাবা কেউ বেঁচে নাই। বড় ভাইয়ের কাছেই থাকে। তাদের অভাবের সংসার বড় ভাইটিও শারীরিকভাবে অক্ষম। শিশুটিকে নিয়ে ভাই-ভাবির মাঝে সমস্যা লেগেই থাকত।

রানীনগর ইউএনও আল মামুন জানান, শিশুটিকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে সে রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি ইউএনওর হেফাজতে আছেন। শিশুটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শিশুটির সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 
Electronic Paper