ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তাল কুড়ানোর গল্প

সনজিত দে
🕐 ১২:২৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২০

গাঁও গেরামের তালগাছ নিয়ে নানা কথা চালু রয়েছে। দীপেনের দাদিও কখনো কখনো তালগাছ নিয়ে কিছু কিছু কথা বলে ফেলেন, ‘দাদুভাই, সন্ধ্যা নামলেই আর তালগাছের দিকে কেউ যাবে না।’

‘কেন, কেন দাদি?’ হা হা করে ওঠে দীপেনরা।

‘তা বাবু তোমাদের অতসব শুনে কাজ নেই। সন্ধ্যার পর আর রাতে তালগাছের ওদিকে যাবে না। জানো, তালগাছে আমরা শুনেছি অশরীরী আত্মা ও ভূত আঁধার নামলেই ঝেঁকে বসে। ওরা কুকুর-বেড়ালের বেশ ধরে তালতলায় ঘুরে বেড়ায়। সেই শেষ রাতে গাছ থেকে ঝরেপড়া তাল কুড়াতে যারা যায় তাদের ঘাড় মটকায় ঐ ভূতরা। অনেকে মাঝরাতে বা সন্ধ্যায় যেই গেছে- তারা ভয়ে বেহুঁশের মতো তাদের তাড়া খেয়ে বাড়িতে এসে রক্তবমিও করেছে। অনেকদিন হুঁশ জ্ঞানও থাকেনি।’

ভয়ঙ্কর ব্যাপার বাপু, ধুপধাপ তালগাছ থেকে তাল পড়–ক গে বাপু তোমরা কিন্তু ভরদুপুরে আর রাতে তালতলার দিকে পা বাড়াবে না বলে দিলাম। তাইলে বিপদ ডেকে আনবে...!

দাদির কাছে অতসব শুনে ভয়ে চুপসে যায় দীপেন ও মাসুদরা। তারপরও মজার ঘ্রাণের পাকা তাল বলে কথা। লোভ সামলাতে পারে না।

অনেক বড় দীঘি। দীঘির দখিন পাড় ঘেঁষে একটা ফাঁকা বাড়ি। একটু দূরে একটা তালগাছ। তালগাছটি দাঁড়িয়ে আছে অনেক বছর ধরে। আশপাশে আর কোনো গাছ না থাকাতে রাত-বিরাতে অনেকে এর পাশ দিয়ে চলাফেরা করতে ভয় করে।

ভয় করলে কী হবে। তালগাছটির তালগুলো যেমন মজার ঘ্রাণ ছড়ায় তেমনি স্বাদেও অতুলনীয়। এ গাছের ঝরেপড়া তালগুলো বরাবরের মতো রাফিই কুড়িয়ে আনে সবার আগে। গতকাল রাতে খুব বৃষ্টি ও বাতাস হয়েছিল।

দাদির অত ভয় করা মানাকে না মেনে দীপেন ও মাসুদ কদিন ধরে ফন্দি করে দীঘির পাড়ে তাল কুড়াতে যাবে। রাতে মাসুদ দীপেনদের ঘরে ঘুমায়। মোয়াজ্জিনের আজানের সঙ্গে সঙ্গে তারা বেরিয়ে পড়ে। ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে বলে দীপেনের দাদুর দুটি সাদা ধুতি গায়ে জড়িয়ে নেয় দীপেন ও মাসুদ। তারপর রওনা হল।

ওমা, রাফিদের বাড়ি পেরিয়ে একটু সামনে যেতে না যেতে আবছা আলোয় দেখা গেল কে যেন তাদের দিকে যেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে আসছে। দীপেন ও মাসুদ ধারণা করে নিল এটি রাফি ছাড়া আর কেউ নয়। দুজনই সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে নেয় এবং কুঁজো হয়ে রাফির দিকে ছুটে আসতেই রাফি ভয় পেয়ে হাউমাউ করে হারুন ম্যানেজারের বাড়ির দিকে ভোঁ দৌড় দিল। এমন ভয় পাওয়া দেখে দীপেন ও মাসুদ মুখের হাসি চেপে রাখতে পারল না।

‘এই রাফি, এই রাফি দাঁড়া।’ রাফি থমকে দাঁড়ায়। দীপেন ও মাসুদ কাদায় পড়ে থাকা তিনটে তাল রাফির হাতে তুলে দিল।

রাফি বলল, ‘এই প্রথম তোরা আমাকে ভয় দেখাতে পেরেছিস। এই নে একটা করে তাল তোদের।’ এতে দীপেন, মাসুদ কেউ রাফির কুড়িয়ে পাওয়া তাল নিতে রাজি হল না। রাফি রেগে গেল, আর বলল, ‘তোরা যদি একটা করে তাল না নিস তাহলে তিনটি তালই আমি ফেলে দেব।’

একটি তাল পুকুরের দিকে ছুঁড়ে ফেলতে মাসুদ রাফির হাত ধরে ফেলে। দীপেন বলে, রাফি এটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। কোনটা ঠিক হচ্ছে না দীপেন? ‘আমরা তোকে ভয় দেখিয়েছিলাম, এটা তো ঠাট্টার নামে অন্যায়ও করেছি। তোরা অন্যায় করিসনি বরং আমিই লোভ করেছি। প্রতিদিন সবার আগে আমিই রাতে ঝরেপড়া তালগুলো নিয়ে আসতাম।

এটা আমার লোভে পরিণত হয়েছিল। তাছাড়া সত্যি এই গাছের তালগুলো অন্যরকম স্বাদ। আমি অনেক পরে বুঝতে পেরেছি। তাল শুধু আপনার জন্য ধরে না।
রাফির কথায় তিনজনই হেসে ওঠল। তারপর তারা একটা করে তাল নিয়ে খুশি মনে বাড়ির পথ ধরে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper