ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রকল্পের নামে ধাপ্পাবাজি, কোটি টাকা ভাগ-বটোয়ারা

মিঠু আহমেদ, জামালপুর
🕐 ৩:১৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০২৪

প্রকল্পের নামে ধাপ্পাবাজি, কোটি টাকা ভাগ-বটোয়ারা

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে প্রকল্পের নামে ধাপ্পাবাজি করে সরকারের কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে হরিলুট হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। আংশিক কাজ করে পুরো অর্থ উঠিয়ে নিয়েছেন প্রকল্পের সংলিষ্টরা। আর এসব কাজে সহায়তার অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) হুমায়ুন কবীর এর বিরুদ্ধে।

জানা যায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরিষাবাড়ী উপজেলার নির্বাচনী এলাকার আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাবিখা/কাবিটা কর্মসূচির ১ম কিস্তির আওতায় অর্থ ও খাদ্যশস্য (চাল ও গম) দ্বারা ২২টি প্রকল্পের জন্য ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। প্রতিটি প্রকল্পেই দেখা গেছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র। নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের নাম ও প্রকল্পের তালিকাসহ অন্যান্য সব তথ্য সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ও নিজ নিজ উপজেলায় প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না সরিষাবাড়ী উপজেলায়। এবিষয়ে তথ্য অধিকার ফরমে আবেদন করেও প্রকল্পের তথ্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা। প্রকল্প হরিলুটের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই সাংবাদিকদের তথ্য প্রদান করা হয় না। এ ছাড়াও ইউএনও শারমিন আক্তার আবেদন করা সাংবাদিকদের নাম্বার ব্ল্যাক লিস্টে রাখে। ডেকে নিয়ে মামলার হুমকি দেয়।

প্রকল্পগুলিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নলসুন্দা হিরণের বাড়ি হইতে লালুর বাড়ি হয়ে বেলালের দোকান পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ৬৫০০০০ টাকা, বেলালের দোকান হইতে ইমরানের বাড়ি হয়ে কুরার মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত ৬৫০০০০, আওনা জামে মসজিদ হতে রফিকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬৮০০০০, চর সরিষাবাড়ী মতিমুন্সীর বাড়ি হতে মানিকপটল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ৬৮০০০০, চুনিয়াপটল মইন উদ্দিনের ঘাট হতে কালু ফকিরের সীমানা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬৮০০০০, মাজালিয়া সালামের দোকান হতে কাদের মাষ্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬৪০০০০, ভাটারা ইউনিয়নের ডালপাড়া জুরায়েতের বাড়ি হতে সাপলেঞ্জা স্বপন মাষ্টারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬৪০০০০, ডালপাড়া জয়নগর মাদরাসা হতে সুলতানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬৩০০০০, ফুলদহ বাচ্চুর বাড়ি হতে মাটিয়াজানি শেষ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬৫০০০০, ভাটারা ফুলদহ বটতলা হতে ফুলদহ জামে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬০০০০০, কামরাবাদ ইউনিয়নের শুয়াকৈর রাসেলের দোকান হতে জসীম সুতারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬০০০০০, সাতপোয়া ইউনিয়নের ছাতারিয়া মদ্যপাড়া বাসানির দোকান হতে শুয়াকৈর সিমানা পর্যন্ত ৬০০০০০, আদ্রা বেলাল ডাক্তারের বাড়ি হতে আব্দুল করিমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬৬০০০০, চর রৌহা কাঠের ব্রীজ হতে আকন্দ বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬০০০০০, ঘোড়ামাড়া বাদশাহ মিয়ার বাড়ি পাকা রাস্তা হতে ওলিপাড়া মসজিদ হয়ে নদীরপাড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬০০০০০, ভাটারা ইউনিয়নের চর হরিপুর কাইয়ুম এর বাড়ি হতে চান্দের হাওরা বাজার পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬৪০০০০, কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়ড়া জামে মসজিদ হইতে দেলোয়ারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬০০০০০, ডোয়াইল ইউনিয়নের সরাফত এর মোড় হতে ঝিনাই নদীরঘাট পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬০০০০০, পরমানন্দপুর তেমাথা মোড় হতে শাহজাদার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬০০০০০, পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়ড়া আবু বকর এর বাড়ির পাকা রাস্তা হতে পুর্ব দিকে মোল্লা বাড়ির কবরস্থান পর্যন্ত রাস্ত সংস্কার ৬০০০০০ এবং বয়ড়া নওশের এর বাড়ি পাকা রাস্তা হতে আজাদ মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ৬০০০০০ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দের কাজগুলো প্রতি প্রকল্পে ২০-৩০ হাজার টাকার কাজ করে কাগজকলমে বাস্তবায়ন দেখিয়ে অধিকাংশ বরাদ্ধের টাকা উত্তোলন করে হরিলুট করা হয়েছে।

সামছুল, মনির, কালাম, জাকির মিয়াসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রকাশ্যে টিআর কাবিখার নামে অনিয়ম দুর্নীতি করা হচ্ছে এই উপজেলায়। অথচ এলাকার কোনো উন্নয়ন করেনি ডা. মুরাদ হাছান। তার প্রতিনিধি সাথাওয়াতুল আলম মুকুল উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) হুমায়ুন কবীর এর সাথে সমন্বয় করে প্রকল্পের চেক গুলো নিয়ে নিজেই বিল তুলে নিয়েছেন। পাশাপাশি ইউএনও ও পিআইও তাদের কমিশন ৫-৬ পার্সেন্ট পৌঁছে দিতেন। ফলে কাগজপত্রে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও বাস্তবে বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দের প্রায় ৭০ ভাগ অর্থ নয়ছয় করে আত্মসাৎ করছেন তারা। উপজেলাবাসী এসব দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন।

কয়ড়া এলাকার সুমন জানান, প্রায় ৪-৫ মাস আগে রাস্তার পাশের মানুষের ফসলি জমি কেটে নিয়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মাটি কেটেছে শুনেছি। জমি থেকেই নিয়েছে রাস্তার মাটি। এতে দরিদ্র শ্রমিকের পাশাপাশি কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এসব অনিয়মের সবই হয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের চোখের সামনে। কিন্তু, কাউকেই কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখি নাই।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে এই অনিয়ম ও দুর্নীতি।

ছাতারিয়া এলাকার রাকিব জানান, একদিন ভেকু দিয়ে মাটি কেটেছিল দেখেছিলাম। তবে মনে হয় সব মিলিয়ে ৪০-৫০ হাজার টাকার মাটি কেটেছে। রাস্তা একই থাকে শুধু নাম পরিবর্তন হয়।

এব্যাপারে সরিষাবাড়ী উপজেলার পিআইও হুমায়ুন কবীরকে একাধিকবার কল দেওয়া হলে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

কথা হলে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তারকে কল দেওয়া হলে নাম্বার ব্যস্ত থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তার অফিসে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি নাকি মাসে ১৫ দিনও অফিস করেন না।

জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন খোলা কাগজকে বলেন, প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হয়নি। এবং সরিষাবাড়ী উপজেলার প্রকল্পের কাজের সমাপ্ত প্রতিবেদন এখনো আমার কাছে জমা দেয়নি। যদি কেউ লুটপাট করে থাকে তাহলে প্রতিবেদন জমা দিলে তা দেখে ব‍্যাবস্থা নেয়া হবে।

 
Electronic Paper