ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আংশিক শরিয়াহ ব্যাংকে বিপুল টাকা অলস

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০২০

সমস্যায় পড়েছে অংশিক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো। করোনার মধ্যে আমানত সংগ্রহ করলেও বিনিয়োগ করতে পারেনি। বিপুল পরিমাণ অলস টাকা পড়ে আছে। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো অর্থ বিনিয়োগ করতে না পারার কারণে একদিকে আমানত থেকে কোনো অর্থ আসছে না। আর আমানত থেকে কোনো অর্থ না আসার কারণে গ্রাহকরাও মুনাফার অংশ পাচ্ছেন না।

দেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে। গ্রাহকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে মনোযোগী হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকও এখন অংশিক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং শুরু করেছে। এ ধরনের আংশিক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের সংখ্যা প্রায় ২০। আর পূর্ণ ইসলামী ব্যাংক সংখ্যা ৮।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকরা সুদের পরিবর্তে পেয়ে থাকেন মুনাফার অংশ। ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করার পর বিনিয়োগ করে। এবং বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা আসে তারই অংশ বা প্রভিট শেয়ার পেয়ে থাকেন গ্রাহকরা। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে আমানত সংগ্রহ করে ইসলামী শরিয়াহ আইন মেনে বিনিয়োগ করতে হয়। অংশিক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো করোনাকালে আমানত সংগ্রহ করে বিতরণ করতে পারছে না। অতিরিক্ত তারল্য নিয়ে সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু প্রচলিত ও পূর্ণ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে তুলনামূলক ঋণ বিতরণের হার বেশি।

একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের সাবেক এমডি খোলা কাগজকে বলেন, করোনাকালে নতুন করে ঋণ বিতরণ হচ্ছে না। পুরাতন গ্রাহকের প্রয়োজনে বিনিয়োগ করছে। পূর্ণ ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের পুরাতন গ্রাহকদের মাঝে বিনিয়োগ করছে। নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছে না। আংশিক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো নতুন গ্রাহক না পাওয়ার কারণে বিনিয়োগ করতে পারছে না। এ কারণে এ সব ব্যাংকে তারল্য বাড়ছে।

তথ্যে দেখা যায়, সোনালী ব্যাংকের মোট শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে আমানত সংগ্রহ করেছে ৪৫৭ কোটি টাকা; বিতরণ করেছে মাত্র ৫ ভাগ। এবি ব্যাংকের শরিয়া আমানত ৬১০ কোটি টাকা; বিতরণ করেছে ৮৪ শতাংশ। ব্যাংক এশিয়া দুই হাজার ৬৮ কোটি টাকা আমানতের মধ্য বিতরণ করেছে ৭০ শতাংশ। সিটি ব্যাংক এক হাজার ৪৩৪ কোটি টাকার মধ্যে বিতরণ করেছে ৫৬ শতাংশ। ডাচ বাংলা ৮৫৪ কোটি টাকা আমানতের মধ্যে বিতরণ করেছে ৪৬ শতাংশ। যমুনা ব্যাংক আমানতের ৬ শতাংশ বিতরণ করেছে; ব্যাংকটির বিতরণের পরিমাণ ৪১৯ কোটি টাকা। মধুমতি ব্যাংক ৯১ কোটি টাকা আমানতের মধ্যে বিতরণ করেছে মাত্র ২৩ শতাংশ। মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৩৫ কোটি টাকার আমানতের কোনো ঋণই বিতরণই করতে পারেনি।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক বিতরণ করেছে সংগৃহীত আমানতের মাত্র ১৫ শতাংশ। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ৪১২ কোটি টাকা আমানতের বিপরীতে বিতরণ করেছে ৭৬ শতাংশ। প্রিমিয়ার ব্যাংক ৯৭৮ কোটি টাকা আমানতের মধ্যে বিতরণ করেছে ৯০ শতাংশ। প্রাইম ব্যাংকে দুই হাজার ২৬১ কোটি টাকা আমানত। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের হার মাত্র ৫৪। পূবালী ব্যাংকের ৩৯৪ কোটি টাকার মধ্যে বিতরণ করেছে ৫১ শতাংশ। এসবিএল আমানতের ৭৪ কোটি বিতরণ করেছে। সাউথ ইস্ট ব্যাংক দুই হাজার ৭৬ কোটি টাকা আমানতের মধ্যে বিতরণ করেছে ৮১ শতাংশ। ব্যাংকটির বিনিয়োগের পরিমাণ তুলনামূলক কম। ট্রাস্ট ব্যাংক তিন হাজার ৭৩৭ কোটি টাকার মধ্যে ৫৮ শতাংশ বিতরণ করতে পেরেছে। অন্যদিকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক কোনো টাকাই বিনিয়োগ করতে পারেনি।

শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা দেখে বিদেশি ব্যাংকগুলোও বসে নেই। তারাও শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং শুরু করেছে। এসব ব্যাংকের মূল দেশ মুসলিম দেশের বাইরে অমুসলিম দেশও রয়েছে। কিন্তু তারাও বিনিয়োগে সুবিধা করতে পারছে না। আল আরাফা ৪৫৫ কোটি টাকা আমানতের মধ্যে বিনিয়োগ করেছে ৫০ শতাংশ। হংকংভিত্তিক এইচএসবিসি ব্যাংক আমানতের কোনো টাকাই বিতরণ করতে পারেনি। অন্যদিকে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড চার্টার্ড ব্যাংক এক হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার মধ্যে বিনিয়োগ করেছে এক হাজার ৬৮ কোটি টাকা। যা মোট আমানতের ৬২ শতাংশ।

অন্যদিকে পূর্ণ শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর গড় বিনিয়োগের ৬২ শতাংশ। ব্যাংকগুলো হাল তথ্যে দেখা যায়, ইউনিয়ন ব্যাংকের বিতরণের হার ৯৯ শতাংশ। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগের হার ৭৬ শতাংশ। ৯২ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংক আমানতের ৯৭ শতাংশ; সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ ৯১ শতাংশ; আল আরাফা ব্যাংকের ৮৩ শতাংশ; আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৭০ শতাংশ এবং দেশের সব চেয়ে বড় শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে ৮২ শতাংশ।

 
Electronic Paper