ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রভিশন ঘাটতি নিম্নমুখী

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বোঝা কমছে না

জাফর আহমদ
🕐 ১১:৩৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০১৯

সর্বাত্মক চেষ্টার ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ হ্রাস ও প্রভিশন ঘাটতি কিছুটা কমেছিল। কিন্তু তারপরও নতুন করে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতিতে পড়ার কারণে বোঝা রয়েই যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, প্রভিশন সংরক্ষণ হলো গ্রাহক স্বার্থ রক্ষার্থে খেলাপি ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করা বা সঞ্চিতি রাখা। যা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ভিন্ন ভিন্ন হারে অর্থ সংরক্ষণ করা যা ব্যাংকের মুনাফা থেকে সংরক্ষণ করা হয়। প্রভিশন ঘাটতি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রাহকের জন্য ভয়ের কারণ হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রাহকের জন্য ততটা নয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি কমেছে ৩৭৭ কোটি টাকা। এ সময়ে একক ব্যাংক হিসাবে প্রভিশন ঘাটতি কমলেও নতুন করে আর একটি ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ফলে ডিসেম্বর প্রান্তিকে আগের ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতি কমে এলেও প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৮৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারটি। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকটির ৫ হাজার ৭৫০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখার কথা ৪ হাজার ৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ব্যাংকটি প্রভিশন রেখেছে ৩ হাজার ৪৮১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ঘাটতির পরিমাণ ৫৯৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। এক বছর আগে ব্যাংকটির কোনো প্রভিশন ঘাটতি ছিল না।

সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সোনালী ব্যাংকের বর্তমান প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৩ হাজার ৮৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ব্যাংকটির ১২ হাজার ৩১ কোটি খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করার কথা ৭ হাজার ২৩১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংকটি সংরক্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে ৪ হাজার ১৪৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এক বছর আগে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এক বছরে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি কমেছে।

এক বছরে বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতিও কিছুটা কমেছে। এক বছর আগে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৬৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্যাংকটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৮ হাজার ৬৩১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ৫ হাজার ৫৪৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রভিশন রাখার কথা ছিল; ব্যাংকটি রেখেছে ২ হাজার ১৭৬ কোটি ৭৮ টাকা। মন্দঋণের ভারে ব্যাংকটি ক্ষতবিক্ষত হলেও এক বছরে প্রভিশন ঘাটতি কিছুটা কমে এসেছে।

অপর রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতিও নিম্নমুখী হয়েছে। এক বছর আগে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এক বছর পর ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৩৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সর্বশেষ ব্যাংকটির ৪ হাজার ১৪০ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বিপরীতে প্রভিশন রাখার কথা ছিল ২ হাজার ৩৯৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংকটি রাখতে সমর্থ হয়েছে ১ হাজার ৫৬৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এ সব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসার কারণে প্রভিশন ঘাটতিও কমে এসেছে। তবে এখনো ব্যাংকগুলো বোঝা রয়ে গেছে। যদিও এ সব ব্যাংকের মালিক সরকার হওয়ার কারণে গ্রাহকের দায়দেনা সরকারই নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আমানতকারীর ভয়ের কোনো কারণ নেই। যেমনটা বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।

 
Electronic Paper