ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাণিজ্য মেলায় এবার নজর কাড়ছে কারা পণ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২০

বেচাকেনা আর বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। জীবনের প্রয়োজনীয় সব পণ্য ও সেবার বিশাল সমাহার নিয়ে বসছে বাণিজ্যমেলার আসর। বড়দের পাশাপাশি বাণিজ্যমেলায় নির্মল আনন্দে মেতে উঠছে শিশু-কিশোররাও। গত ২০ দিনে সাড়ে পাঁচ লাখ দর্শনার্থী প্রবেশ করেছে মেলায়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মাঠে মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলা।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় প্রতিবারের মতন এবারও স্টল নিয়েছে বাংলাদেশ জেল। এ স্টলে রয়েছে কারাগারের কয়েদিদের বানানো পণ্যের সমাহার। রয়েছে কাঠের তৈরি সিংহাসন, বেতের তৈরি মোড়া, প্লাস্টিকের মোড়া, কাঠের নৌকা, সুতি তোয়ালে, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট, লুঙ্গি, পুঁথির কলমদানিসহ শতাধিক পণ্য। দামও রয়েছে সাধের মধ্যে। দর্শনার্থীরা একবার হলেও স্টলে ঢুঁ-মারছেন। কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের বানানো এসব পণ্যগুলোর লাভের অর্ধেক অংশ চলে যাবে তাদের পকেটে। চাইলে লাভের টাকা কয়েদির পরিবারের কাজে লাগাতে পারবেন। অথবা মুক্তির পর টাকা নিয়ে যেতে পারবেন।

বাণিজ্য মেলায় পাওয়া যাচ্ছে জেলখানার কয়েদিদের হাতে তৈরি করা নানা পণ্য। পোশাক, আসবাবপত্র, রান্নার উপকরণসহ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় বেশ কিছু পণ্য পাওয়া যাচ্ছে 'কারাপণ্য' নামের মিনি প্যাভিলিয়নে। বাণিজ্য মেলার প্রধান গেট থেকে প্রবেশ করে হাতের বাম পাশে, মেলার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত এই মিনি প্যাভিলিয়ন। গত দুই বছরের মতো এবারও কারা কর্তৃপক্ষ কারাপণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য কারাপণ্য নিয়ে এসেছেন মেলায়।

প্যাভিলিয়নে পণ্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে কাঠের তৈরি চেয়ার, বেতের চেয়ার, বাঁশের চেয়ার, টেবিল, মোড়া, খাবারের ঢাকনা, সাধারণ ব্যাগ, পাটের ব্যাগ, পাটের ফাইল, ভ্যানিটি ব্যাগ, চায়ের টেবিল, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, পুঁতির তৈরি মানিব্যাগ, জুতা, বিছানার চাদর, কাপড়, পাপোশ, টি-শার্ট, নকশিকাঁথা, পুঁতি দিয়ে তৈরি নানা উপহার সামগ্রী। পণ্যের দাম এবং কোন কারাগারে তৈরি করা হয়েছে তা উল্লেখ করা আছে পণ্যের গায়ে। ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে পাটের ব্যাগ। মোড়া পাওয়া যাচ্ছে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। বাঁশ ও প্লাস্টিকের সংমিশ্রণে তৈরি বড়ো চেয়ার পাওয়া যাচ্ছে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। সিংহাসন চেয়ার পাওয়া যাচ্ছে ২৫০০-৪৫০০ টাকায়। ফলের ঝুড়ি ১০০-২৫০ টাকা, বাঁশের কুলা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, পানদানি এবং কলমদানি ও ফুড কভার ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া টি-শার্ট ২০০-৫০০ টাকা, ২০০০-৪০০০ টাকায় নকশিকাঁথাসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

প্যাভিলিয়নের দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা জানান, ‘কারাগারকে বন্দিশালা থেকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টারই অংশ কারাপণ্য। কয়েদিরা মুক্তি লাভের পরে যেন কাজের মধ্যে যুক্ত থাকতে পারেন এজন্যই এমন পণ্য তৈরির উদ্যোগ। ফলে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। এছাড়া যেকোনো পণ্য বিক্রি হলে তার লাভের একটা অংশ বন্দির অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।’

প্যাভিলিয়নে কারাপণ্য দেখতে আসা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘আগে কখনো কারাপণ্য দেখিনি। সাধারণত কারাগারে বন্দিদের আমরা নেতিবাচক চোখে দেখি। কিন্তু তারা জেলখানায় থেকেও মানসম্মত নানা রকমের পণ্য তৈরি করছেন। পণ্যের দামও খুব বেশি না। নকশিকাঁথা, বেতের চেয়ার, বাঁশের চেয়ার, মোড়া, পাটের ব্যাগ, পাটের ফাইল অনেক ভালো লেগেছে। অন্যসব স্টল বা প্যাভিলিয়ন থেকে এটি একেবারে ভিন্ন ধরনের।’ বছরজুড়ে এসব কারাপণ্য কারাগারের বিক্রয়কেন্দ্রে পাওয়া যায়। তবে বাণিজ্য মেলায় একই প্যাভিলিয়নে সব পণ্য একসঙ্গে পাচ্ছেন ক্রেতারা।

 

 
Electronic Paper