বিদ্যুতে পাল্টে গেছে চরবাসীর জীবনমান
মাহমুদ লিটন, লালমোহন (ভোলা)
🕐 ৮:২৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২৩
চরবাসী মূল ভূ-খণ্ডের মানুষের থেকে পিছিয়ে থাকেন জীবনযাত্রায়। তবে ভোলার তজুমদ্দিনের মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন বেশ কয়েকটি চরের বাসিন্দাদের জীবনমান আলাদা। এর পেছনে রয়েছে বিদ্যুৎ। বলা হয়ে থাকে যেখানে বিদ্যুৎ থাকে সেখানের মানুষ দিনদিন উন্নত ও সমৃদ্ধ হতে থাকে। তেমনই ঘটছে তজুমদ্দিন উপজেলার বিচ্ছিন্ন চরবাসীর ক্ষেত্রে।
জানা যায়, মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে নয় কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে তজুমদ্দিনের সোনাপুর এবং চাঁদপুর ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। এই দুই ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চর নাসরিন, চর জহিরউদ্দিন, চর আব্দুল্লাহ, তেলিয়ার চর এবং চর মোজাম্মেলসহ আরো কয়েকটি চরে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন সাড়ে ছয় হাজার। এর সুফল ভোগ করছেন এসব চরের ২০ থেকে ২২ হাজার মানুষ। এতে চরগুলোতে গড়ে উঠছে বিভিন্ন কল-কারখানা। পরিবর্তন হচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান।
তজুমদ্দিনের বিচ্ছিন্ন চরের বিদ্যুতের সুফলভোগী হান্নান ফরাজী, মো. নীরব, ইদ্রিস সেরাং ও টুনু মিয়া বলেন, বিদ্যুৎ ছিল আমাদের চরবাসীর কাছে স্বপ্নের মতো। বছর দুয়েক আগেও রাতে আমাদের ভরসা ছিল কুপিবাতি ও হ্যারিকেনে। বিদ্যুৎ আসার পর এখন আমরা রাতে বিদ্যুতের আলোয় প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছি। রাতের বেলায় চলাফেরাতেও সুবিধা হচ্ছে। এছাড়া, টিভি এবং স্মার্টফোনের মাধ্যমে আমরা দেশ-বিদেশের খবর মুহূর্তে পাচ্ছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরাও এখন বিদ্যুতের আলোয় পড়ালেখা করতে পারছে। বিদ্যুৎ আসার কারণে চরবাসী দিনদিন এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মতো মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগের জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তজুমদ্দিন প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. হেলাল উদ্দিন সুমন জানান, যেখানে বিদ্যুৎ থাকে সেখানকার মানুষের জীবনমান খুব দ্রুত সময়ে বদলে যায়। আমাদের উপজেলার বেশ কয়েকটি চরে এরইমধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছেছে। এক সময় এসব চরবাসীর কাছে বিদ্যুৎ কল্পনার বাইরে ছিল। তবে এখন তাদের কাছে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। এর ফলে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষদের জীবনমান দিনদিন উন্নত হচ্ছে। স্থানীয় এমপির আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই এসব চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের তজুমদ্দিন সাব-জোনাল অফিসের এজিএম আব্দুল মালেক বলেন, বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কারণে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটছে চরাঞ্চলবাসীর। চরে ক্ষুদ্র কুঠির শিল্পের বিকাশ ঘটছে এরইমধ্যে চরে কয়েকটি রাইসমিল হয়েছে। গড়ে উঠেছে বরফ কল। বিদ্যুৎ সংযোগ আসার কারণে চরগুলোতে গড়ে উঠছে বিভিন্ন হাঁস-মুরগির খামার। এতে করে তজুমদ্দিনের বিচ্ছিন্ন বেশ কয়েকটি চরের মানুষের জীবনমান ব্যাপকভাবে পরিবর্তন হচ্ছে। এ অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
লালমোহন-তজুমদ্দিন আসনের সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন জানান, ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমান সরকারের আমলেই দেশের প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাতে পারা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্যই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে দেশের বিদ্যুৎখাত এখন উন্নত-সমৃদ্ধ।