বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: বৃহস্পতিবারের উল্লেখযোগ্য সাত সংবাদ      ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’      নির্বাচনে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী : ইসি সচিব      ৪৫তম বিসিএস নন-ক্যাডারের ফল প্রকাশ, সুপারিশ পেলেন ৫৪৫ জন      বন বিভাগে সুফল প্রকল্পে দুর্নীতি, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দাম্ভিকতা      ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হলে কৃষি অর্থনীতি টেকসই হবে : কৃষি সচিব      ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেয়া হবে না : ধর্ম উপদেষ্টা      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
ভোট এলেই ভোট ও ভোটারের বাজার চড়া
বিমলেন্দু রায়
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৫ এএম
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে অথবা উপমহাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভোটের মৌসুম এলেই ভোট ও ভোটারের বাজার চড়া হয়ে যাওয়া একটি বহুল আলোচিত বিষয়। এটি সাধারণত নির্বাচনি রাজনীতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা হঠাৎ বেড়ে যায়। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের প্রচার, সভা, মিছিল, দরজায় দরজায় প্রচারণা চালাতে শুরু করে। এ সময় তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ করে যা অন্য সময় দেখা যায় না। ভোটের সময় দলগুলো উন্নয়ন, রাস্তা, ব্রিজ, স্কুল, চাকরি সবকিছু করার আশ্বাস দিয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবসম্মত না হলেও ভোট পাওয়ার উদ্দেশ্যে এসব বলা হয়। এ সময় ভোটারদের গুরুত্ব বেড়ে যায়। নির্বাচনের আগে সাধারণত ভোটাররা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। রাজনীতিবিদরা তাদের সংগে ভালো ব্যবহার, সৌজন্য খোঁজখবর নেওয়া এসব বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় গ্রামীণ এলাকায় ভোটারদের বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে সালাম, দোয়া নেওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। কিছু অঞ্চলে অনিয়ম বা অস্বচ্ছ রাজনীতির দৃশ্যও দেখা যায়। যেমন টাকা দিয়ে ভোট কেনা। উপহার হিসেবে চাল, ডাল, কাপড় দেওয়া ও বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রথাও চোখে পড়ে। এগুলো ভোটের বাজারকে অস্থায়ীভাবে চড়া করে। নির্বাচন মানে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা। কোনো দল বা প্রার্থী জিতে গেলে বড় ধরনের রাজনৈতিক ও আর্থিক লাভ হতে পারে। এ কারণেই প্রার্থীরাও যে করেই হোক জয় নিশ্চিত করতে চেষ্টা করে। ফলে ভোট নিয়ে টানাপোড়েন, দরকষাকষি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ে। নির্বাচন নিয়ে মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উত্তপ্ত হয়। টিভি, পত্রিকা, ফেসবুক সব জায়গাতেই ভোট নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। জনমত গঠন বা প্রভাবিত করতে প্রচুর প্রচার-প্রচারণা চলে যা নির্বাচনের বাজারকে আরো গরম করে তোলে। এ সময় ভোটারের মূল্য বাড়ে। রাজনীতিবিদদের ব্যস্ততা বাড়ে।

প্রতিশ্রুতি, উপহারের ছড়াছড়ি ঘটে। রাজনৈতিক উত্তেজনা ও প্রতিযোগিতা চরমে পৌঁছে যায়। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলো প্রচার-প্রচারণা চালাতে শুরু করে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করে। তাদের ভাষায় তোমাদের উন্নয়ন হবে, তোমাদের চাকরি হবে, রাস্তাঘাট, ব্রিজ হবে, এমন হাজারো প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। নির্বাচনি প্রচারণার সময় প্রার্থীরা কখনো কখনো বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে শুরু করে। আবার নিজের দলের অর্জনকে অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে উপস্থাপন করে। যাতে করে ভোটারদের মনোভাবের পরিবর্তন হয়। ভোটের বাজারে একটি বিষয়ে খুব সহজেই নজর চলে আসে তা হলো অর্থনৈতিক লেনদেন। কিছু এলাকায় বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা ভোট কেনার চেষ্টা করেন। এটা কখনো প্রকাশ্যে হয়ে ওঠে।

আবার কখনো গোপনে চলে। যদিও এটা আইনত অপরাধ। কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশে এ রকম পরিস্থিতি প্রায়ই দেওয়া যায়। এই বাজারে সবাই নিজ নিজ স্বার্থের হিসব-নিকাশে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রার্থীরা নিজেদের জনগণের সেবক হিসেবে উপস্থাপন করে। এ সময় সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও এবং ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেসব প্রচারণা মন্তব্যে প্ল্যাটফরমগুলো সরগরম হয়ে ওঠে। ভোটের বাজারে গরম আবহাওয়া বেড়ে যায়। রাজনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে উত্থান-পতন হতে থাকে। নির্বাচনের বাজারে চড়া হয়ে যায় ভোটের দাম, ভোটারের দাম বাড়ায়। প্রতিশ্রুতি আসে, সঙ্গে আসে আশ্বাস সবই তো মিথ্যা তবুও আসে বিশ্বাস। এই ভোটের সময় মারামারি ঘটে অহরহ। গ্রামাঞ্চলে চায়ের দোকানগুলোতে লোকের সরগরম ঘটে। দোকানিদের বেচাকেনা বেড়ে যায়। অনেক রাত পর্যন্ত চলে এ আড্ডা। প্রার্থীরা নিশাচরের মতো রাত-বিরাতে গভীর রাত পর্যন্ত কখনো হেঁটে, কখনো মোটরসাইকেলে, মোটরগাড়িতে চলাফেরা করে।

বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নির্বাচন সাধারণত একটি নিয়মতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া। সেখানে নির্বাচন মানে নাগরিক অধিকার প্রয়োগের উৎসব। যেখানে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও ভোটার সকলে একটি নিরপেক্ষ পরিবেশে অংশ নেয়। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা এখনো অনেকটাই ভিন্ন। বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব, উত্তেজনা এবং অনিশ্চিয়তা, এগুলো আমাদের নির্বাচনি প্রক্রিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পেছনে রয়েছে ইতিহাস, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা এবং সামাজিক বাস্তবতাই দায়ী। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের প্রতি গভীর অবিশ্বাস পোষণ করে। প্রতিটি নির্বাচন ঘিরে প্রধান দলগুলো বিভিন্ন অভিযোগ তোলে। যেমন-নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসন একটি পক্ষকে সুবিধা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দল নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে। বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। এই পারস্পারিক অবিশ্বাসই নির্বাচনি উত্তেজনা তৈরি করে। বহির্বিশ্বে নির্বাচনি একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা। আমাদের দেশে তা রাজনৈতিক সংঘর্ষের মঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক দেশ বহু বছর ধরে একটি নির্দিষ্ট ও স্বীকৃত নির্বাচনব্যবস্থা অনুসরণ করে। কিন্তু আমাদের দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচনকালীন সরকার, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এমন নানা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ফলে জনগণের মনে স্থায়ী আস্থা তৈরি হয়নি। আজও ভোট নিয়ে আলোচনা শুরু হলে প্রথম প্রশ্ন হয় ‘এবার নির্বাচনে কার পক্ষ কতটা প্রভাব ঘটাবে’ এই অনিশ্চয়তাই মূল উত্তেজনার উৎস হয়ে দ্বাড়ায়। বহির্বিশ্বে নির্বাচন কমিশন সাধারণত সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং তাদের সিদ্ধান্ত প্রশ্নহীনভাবে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন, মাঠ পর্যায়ের ভোটকেন্দ্র নিয়ে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ, শক্তিশালী দলের প্রভাব ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা এ ধরনের বিতর্ক উঠে আসে। ফলে জনগণ মনে মনে ভাবে ‘আমার ভোট কি ঠিকভাবে গণনা হবে।’ তা ছাড়া নির্বাচনের আগে দলীয় সংঘর্ষ, মিছিল, মিটিংয়ে উত্তেজনা, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, অস্ত্রের প্রদর্শন ও বিরোধীদের ভয়ভীতি এসব ঘটনা যেন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে। আর বহির্বিশ্বে ভোট মানে শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণ, আর আমাদের দেশে অনেক সময় ভোট মানেই সংঘর্ষ ও ঝুঁকি।

ফলে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তেজিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে মানুষ। বহির্বিশ্বে নির্বাচন রাজনীতি অধিকাংশ ক্ষেত্রে মতাদর্শ ভিত্তিক। আর আমাদের দেশে ক্ষমতা অর্জনের লড়াইটি অনেক সময় ‘উচ্চ বিনিয়োগ, উচ্চ প্রত্যাবর্তন’ ভিত্তিক হয়ে দাঁড়ায়। বহির্বিশ্বে অধিকাংশ নাগরিক জানেন নির্বাচন সময়মতো হবে। সুষ্ঠুভাবে হবে। ফলাফলের ওপর আস্থা রাখা যাবে। যতদিন পর্যন্ত একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও দীর্ঘমেয়াদি নির্বাচনব্যবস্থা নিশ্চিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত এই উত্তেজনা ও অবিশ্বাসের আবহ অব্যাহত থাকবে। এই বৃত্ত থেকে বের হতে হলে জনগণ, প্রশাসন, গণমাধ্যম এবং সামগ্রিক সমাজের সম্মিলিত চেষ্টার ফলেই সম্ভবপর হবে বলে প্রত্যাশা।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক, সাবেক উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

কেকে/ আরআই
আরও সংবাদ   বিষয়:  ভোট   ভোটার  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বৃহস্পতিবারের উল্লেখযোগ্য সাত সংবাদ
তরুণ, যুব ও মেধাবী ছাত্র সমাজকে রক্ষায় সুস্থ সংস্কৃতি জরুরি: রায়হান সিরাজী
৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’
চালাক ছাত্রী

সর্বাধিক পঠিত

নাগেশ্বরীতে ১০ টাকার স্বাস্থ্য সেবা চালু
চাঁদপুর-২ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা রয়েছে: তানভীর হুদা
দুই ট্রলারসহ সেন্টমার্টিনে ১২ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি
গাজীপুরে রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী
এশিয়ান টাউনস্কেপ অ্যাওয়ার্ডসে সম্মাননা পেল রাজউক

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close