চট্টগ্রামে আদালতে নাম সর্বস্ব পত্রিকার নামে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রীতিমত দৌরাত্ম্য সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিউজ সংগঠনের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তারা যখন তখন ঢুকে যাচ্ছেন বিচারকের খাস কামরায় (চেম্বারে)। সংঘবদ্ধভাবে বিচারকের খাস কামরায় ঢুকে বিজ্ঞাপনের জন্য বিচারক ও তার অধীনস্তদের চাপ দিচ্ছেন তারা। পুরো আদালত এলাকায় এ ধরণের কর্মকান্ডে বিব্রত সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যমতে, প্রতিদিন আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠে আদালত প্রাঙ্গণ। গুরুত্বপূর্ণ বিট হিসেবে আদালতের খবর ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীরাও নিয়মিত আদালত এলাকায় বিচরণ করেন।
সম্প্রতি আদালত পাড়ায় বেড়ে গেছে নাম সর্বস্ব পত্রিকার সাংবাদিকদের আনাগোনা। তাদের র্টাগেট বিজ্ঞাপন। পাশাপাশি এ কাজে বিভিন্ন হুমকি ও কৌশলে সংবাদপত্রের নাম ব্যবহার করে তারা আদায় করছেন অবৈধ আর্থিক সুবিধাও। এতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, “আদালত এলাকায় আইনজীবী সমিতির টাউটবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। আদালত এলাকায় সাংবাদিকতার নামে যদি কেউ অনৈতিক কাজ করে সেটা প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করার কাজ সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর। এক্ষেত্রে উভয়পক্ষ কাজ করতে পারে বলে তিনি জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম আদালতের বিভিন্ন দপ্তর ও আইনজীবীদের কক্ষে নিয়মিতই চক্কর কাটেন কিছু অপ্রচলিত ও অখ্যাত পত্রিকার নামধারী সাংবাদিক। নামি-বেনামি অনুমোদনহীন অনলাইন পোর্টাল বা অচেনা পত্রিকার আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা আদালতের বিভিন্ন দপ্তরে সাংবাদিক পরিচয়ে ঘুরে বেড়ান। অনেকে আবার সাংবাদিকের পাশাপাশি সম্পাদক হিসেবেও পরিচয় দেন। তারা সংবাদ সংগ্রহের পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রে আসামিদের জামিনে তদবির, মামলা-বাণিজ্য কিংবা বিজ্ঞাপন তদবির লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠে। তদবির ফলপ্রসূ না হলে নিউজের হুমকিও দেন তারা।
এদিকে নাম সর্বস্ব পত্রিকায় সংবাদের হুমকি দিয়ে রেজিস্ট্রি অফিস, প্রসিকিউশন অফিস এবং বিভিন্ন পেশকারদের থেকে আদায় করেন মাসোহারা। তারা সংবাদের হুমকি ব্যবহার করে এ ধরনের কার্যক্রম চালান। যদি তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হয় বা বিজ্ঞাপন না দেওয়া হয়, তবে তারা সংবাদ প্রকাশের হুমকি দেন। এভাবে ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার ঘটনায় আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম এবং পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মতামত সংশ্লিষ্টদের।
এই বিষয়ে অ্যাডভোকেট নাঈম ভূঁইয়া বলেন, “প্রতিদিনই দেখি কিছু লোক সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আদালতে আইনজীবীদের চেম্বার, বিভিন্ন দপ্তরে আসেন। কেউ বিজ্ঞাপন চায়, কেউ আবার মামলায় সহায়তার আশ্বাস দিয়ে তথ্য নিতে চায়। এদের কার্যকলাপ সাংবাদিকদের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের সেরেস্তাদার পারভেজ বলেন, “অনেকজন এসে পরিচয় দেন সাংবাদিক। কিন্তু তদবির করেন বিজ্ঞাপন ও মামলার জন্য। তাদেরকে কখনো নিউজ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য আসতে দেখিনি। আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের তদবির ও বিজ্ঞাপন দিয়ে সহযোগিতা না করলে নিউজের হুমকি দেন। এমনকি আদালতের কর্মরত পুলিশ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকেও আর্থিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে থাকে। এমনকি মূলধারার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিরাও নিউজ সংগঠন নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন।”
কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, “আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের উপস্থিতি স্বাভাবিক, কারণ এখান থেকেই প্রতিদিন বহু গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ তৈরি হয়। তবে অযোগ্য ও অননুমোদিত কিছু ব্যক্তির কারণে প্রকৃত সাংবাদিকদেরও প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।”
তাদের মতে, প্রয়োজনে আদালত প্রশাসন ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে যৌথভাবে একটি তালিকা তৈরি করা উচিত, যাতে অনুমোদিত গণমাধ্যমকর্মীরাই আদালত প্রাঙ্গণে কাজ করতে পারেন।
মূলধারার গণমাধ্যমকর্মীরাও মনে করছেন, এই ভুয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সাংবাদিকতার পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি এসব নামধারী সাংবাদিকদের কার্যক্রম তদন্তে আনতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
কেকে/এজে