বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: সিসিইউতে খালেদা জিয়া      নিজের গড়া ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিচার হচ্ছে : রিজভী      প্লট দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফের ১৮ বছর কারাদণ্ড      প্লট দুর্নীতি : জয়-পুতুলের পাঁচ বছর কারাদণ্ড      শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড      শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের মামলার রায় আজ, আদালতে বিজিবি মোতায়েন      এবার একযোগে ১৫৮ ইউএনওকে বদলি      
ধর্ম
বানারীপাড়ায় ‘রাখের উপবাস ও ঘৃত প্রদীপ প্রজ্বলন’ অনুষ্ঠিত
বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:৩৮ পিএম
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

কথিত আছে, দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে বাঁচতে কার্তিক মাসে উপবাস পালন করে আশ্রম প্রাঙ্গণে প্রদীপ ও ধূপ জ্বালাতে বলেছিলেন বাবা লোকনাথ। সেই থেকে প্রিয়জনের মঙ্গল কামনায় প্রতি বছর কার্তিক মাসের শেষ ১৫ দিনের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এই উপবাস বা ‘কার্তিকব্রত’ পালন করেন লোকনাথভক্তরা।

কারও কাছে ‘কার্তিক ব্রত’,কারও কাছে ‘রাখের উপবাস’ বা ‘গোসাইর উপবাস’। ব্রতকথার যে নামই হোক না কেন? বিপদ-আপদ, রোগবালাই থেকে মুক্তি পেতে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বানারীপাড়ার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের লোকনাথ অনুসারী ও ভক্তরা ‘রাখের উপবাস’ পালন করেছেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শত নারী-পুরুষ প্রদীপ, ধুপ, ফল, ফুল সামনে নিয়ে একাগ্রচিত্তে লোকনাথের আরাধনায় নিমগ্ন।

ব্রত উদযাপনে আসা ভক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ব্রতের আগের দিন সংযম করতে হয়। তারপর উপবাস থেকে সন্ধ্যায় আগে ধুপ, প্রদীপ ইত্যাদি নিয়ে বসতে হবে। আরাধনায় বসে প্রদীপ জ্বালানোর পর কথা বলা বন্ধ করে দিতে হয়। সংযম, মনোব্রত ও মনকে একাগ্রচিত্তে লোকনাথকে ডাকতে হয়। তারপর প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগ মুহূর্তে পার্শ্ববর্তী গঙ্গায় (নদীতে) বাবা লোকনাথের নামে তা ভাসিয়ে দেওয়া হয়। 

প্রদীপ যখন জ্বলা শেষ হবে, মন্দির থেকে চাল-কলা দিয়ে দেয়। সেই চাল-কলা দিয়েই পুণ্যার্থীরা উপবাস ভঙ্গ করবেন। আবার অনেকে এই চাল-কলা রেখে দেবেন। যখন কোনো বিপদ-আপদ আসবে তখন মানত হিসেবে তারা তা খাবেন।

বিভিন্ন রোগ বালাই হাত থেকে মুক্তি এবং আপনজনদের মঙ্গল কামনায় কার্তিক মাসে এ উপবাস পালন এবং আশ্রম প্রাঙ্গণে ঘিয়ের প্রদীপ ও ধূপ-ধুনা জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বাবা লোকনাথ।

সেই থেকে লোকনাথ আশ্রমে প্রতি বছর কার্তিক মাসে হয় এই উৎসব। ‘রাখের উপবাস’ নামে পরিচিত এই অনুষ্ঠানকে কেউ কেউ ‘কার্তিক ব্রত’ও বলে থাকেন

সূর্য যত পশ্চিমে হেলে যেতে থাকে, ততই বাড়তে থাকে পুণ্যার্থীদের ভিড়। প্রদীপ জ্বালিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে উন্মুক্ত ময়দানে সারিবদ্ধভাবে বসে যান সবাই। চলে মন্ত্রোচ্চারণ। তারপর সবার কল্যাণ কামনা করে প্রার্থনা করেন পুণ্যার্থীরা। এমন প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে বানারীপাড়াতে রাখের উপবাস অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গলবার বানারীপাড়ায় লোকনাথ মন্দির প্রাঙ্গণে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর হাজারও অনুসারী ও ভক্ত আরাধনায় নিমগ্ন থেকে এই রাখের উপবাস পালন করেন।

এ সময় মন্দিরের আঙিনায় প্রত্যেক ভক্তের বসার জন্য নির্দিষ্ট স্থান করে দেওয়া হয়, যাতে পুণ্যার্থীরা শৃঙ্খলার সঙ্গে মাটির প্রদীপ, ঘি, ডাব, দুধ, ফুল, ধান-দূর্বা, ধূপদানি ও কলাগাছের খোল নিয়ে বসতে পারেন।

আয়োজকরা জানান, দুপুরের পর থেকে শুরু হয় প্রার্থনার প্রস্তুতি ও পুণ্যার্থীদের আগমন। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে বেজে ওঠে ঘণ্টা। বানারীপাড়া হরিসভা মন্দির কমিটির সভাপতি উজ্জ্বল কুন্ডু, সম্পাদক তারক কর্মকার, লোকনাথ মন্দির কমিটির সভাপতি বিটু লাল দে, সম্পাদক উত্তম সাহা কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে রাখের উপবাস ও ঘৃত প্রদীপ প্রজ্বলন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে সবাই একযোগে জ্বালাতে শুরু করে প্রদীপ। একসঙ্গে জ্বলে ওঠে শত শত প্রদীপ। সমগ্র এলাকাজুড়ে শুরু হয় এক আলোর নাচন। প্রদীপ জ্বালানো হলে ধূপের ধোয়ায় আচ্ছন্ন আশ্রমে আপনজনের জন্য কল্যাণ কামনা করে প্রার্থনায় মগ্ন হন পুণ্যার্থীরা৷ সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বালন শেষ হলে উপবাস ভাঙার মধ্যদিয়ে শেষ হয় এই ব্রত।

এ সময় বাজনা, উলুধ্বনি, ধূপের ধোঁয়া সব মিলিয়ে আশ্রমে পৌরাণিক মহাজাগতিক অবস্থা বিরাজ করে। পরে ভক্তরা জ্বলন্ত প্রদীপ ও ধূপদানি বানারীপাড়া সন্ধ্যা নদীর জলে বিসর্জন করেন। প্রদীপ বিসর্জন শেষ হলে সারাদিনের উপবাস ভাঙার মধ্য দিয়ে শেষ হয় সব আনুষ্ঠানিকতা।

ব্রত উদযাপনে আসা পুণ্যার্থী সুস্মিতা সাহা বলেন, ‘উপবাস থেকে ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যার পূর্বেই ধূপ-প্রদীপ নিয়ে বসতে হয়। আরাধনায় বসে প্রদীপ জ্বালানোর পর কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে সংযম, মনোব্রতের মাধ্যমে একাগ্রচিত্তে লোকনাথকে ডাকতে হয়। প্রদীপ জ্বলা শেষ হলে মন্দির থেকে প্রসাদ গ্রহণ করে পুণ্যার্থীরা উপবাস ভাঙেন।’

বানারীপাড়া কেন্দ্রীয় সার্বজনীন লোকনাথ মন্দিরের সভাপতি বিটু লাল দে বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এবছরেও লোকনাথ মন্দির প্রাঙ্গণে শুরু হয় রাখের উপবাস। বিপদ-আপদ, রোগবালাই থেকে মুক্তি পেতে সনাতন ধর্মগুরু শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর অনুসারী ও ভক্তরা এই ব্রত পালন করেন। ১৫ কার্তিকের পর বাকি সময় প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এ ব্রত পালন করা হয়। সকলের সার্বিক সহযোগিতায় ও পূন্যার্থীদের সরব উপস্থিতিতে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়েছে।’
 
লোকনাথ সেবাশ্রমের পুরোহিত যতন চক্রবর্তী জানান, কোথাও কোথাও এ উৎসবের নাম রাখের উপবাস, কার্তিক ব্রত, গোসাইর উপবাস কিংবা ঘৃত প্রদীপ প্রজ্বালনের উৎসবও বলে। পূন্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিলো মন্দির আঙিনা।

বানারীপাড়া কেন্দ্রীয় হরিসভা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক তারক কর্মকার বলেন, ‘রাখের উপবাস উপলক্ষে হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সমাগম হয়েছে লোকনাথ মন্দির প্রাঙ্গণে। এবার প্রায় ২০০ পুণ্যার্থী ব্রত পালন করেছেন। অনুষ্ঠান সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছে। মন্দির চত্বরে এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের ধারা অব্যাহত থাকবে।’

কেকে/এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  বানারীপাড়া   রাখের উপবাস   ঘৃত প্রদীপ প্রজ্বলন  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সিসিইউতে খালেদা জিয়া
নিজের গড়া ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিচার হচ্ছে : রিজভী
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনে বুয়েটের প্রতিনিধি দল
৬০ জন প্রশিক্ষিত তরুণ-তরুণী পেলেন কর্মসংস্থানের সুযোগ
নালিতাবাড়ীতে চলতি আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু

সর্বাধিক পঠিত

চট্টগ্রামে কবির হোসেন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলা
কলাপাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় যুবক নিহত
বুধবারের আলোচিত ছয় সংবাদ
প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল
এবার একযোগে ১৫৮ ইউএনওকে বদলি

ধর্ম- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close