২০১৮ সালের নির্বাচনের পর রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা। কিন্তু সেই ঘোষণা ভুলে এবার আবারও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খোন্দকার গোলাম আকবরের সঙ্গে দেখা করে রাজনীতিতে পুনরায় সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি জানান কামাল পাশা। ওই আলাপচারিতার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে পাশা বলেন, “আমি রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলাম, এখন আবার ইন (প্রবেশ) করতেছি।”
জবাবে গোলাম আকবর খোন্দকার তাকে স্মরণ করিয়ে দেন, “আপনি তো বলেছিলেন রাজনীতি করবেন না। আপনার কথাতেই আলমগীর ঠাকুরকে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব করা হয়েছে।”
এর জবাবে পাশা বলেন, “এলাকার মানুষের চাপেই আবার ফিরেছি। শরীর খারাপ হলেও লোকজন খুব চাপ দিচ্ছে।”
পরবর্তীতে নিজের বাসায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার সময় পাশাকে আরও একটি বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায়। তিনি বলেন, “দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয়, দলের হয়ে নির্বাচন করব। না দিলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করব। দলের অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা একটা সন্ত্রাসী দল।”
এই মন্তব্য ঘিরে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর কামাল পাশা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি আর রাজনীতি করবেন না। অথচ এখন তিনিই দলের মনোনয়ন চাইছেন।
তারা প্রশ্ন তুলেছেন বিগত ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরশাসনের সময় মোস্তফা কামাল পাশা দলের জন্য কী করেছেন? কয়বার মামলায় আসামি হয়েছেন, কতদিন কারাভোগ করেছেন, কিংবা দলের বিপদের দিনে পাশে ছিলেন কি না এসব প্রশ্নে সরব স্থানীয় নেতারা।
তাদের অভিযোগ, তিনবার এমপি থাকা সত্ত্বেও কামাল পাশা জিয়া পরিবার বা তৃণমূল বিএনপির পাশে দাঁড়াননি। কোনো আহত বা নিপীড়িত কর্মীর খোঁজও নেননি তিনি। এখন আবার দলীয় প্রতীক ধানের শীষে প্রার্থী হতে চাইছেন।
তবে কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সব জানেন। তিনি সুবিধাবাদীদের ঠেকাতে দৃঢ় অবস্থানে আছেন। এক স্থানীয় নেতা বলেন, “ইনশাআল্লাহ তারেক রহমান সন্দ্বীপবাসীকে হতাশ করবেন না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তফা কামাল পাশা সাংবাদিকদের বলেন, “আমি তখন অসুস্থ ছিলাম, মাঝে মাঝে সেন্সলেস হয়ে যেতাম। শরীরে পেসমেকার বসানো হয়। সেই সময় নেতাকর্মীরা প্রচণ্ড চাপ দেয়। তারেক রহমানের লোক এসে বলেন আমি যেন রাজনীতি না ছাড়ি। এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং রাজনীতিতে সক্রিয়।”
‘নির্বাচন না করার ঘোষণা কেন দিয়েছিলেন’ এমন প্রশ্নে তিনি কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, “আপনাকে কতবার বলব? আমি বলেছি নির্বাচন করব না, তারপর আবার বলেছি করব। যা খুশি লিখেন।”
স্থানীয় রাজনীতিতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে। ভাইরাল ভিডিওটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা।
কেকে/ আরআই