বাসায় স্বামী রেখে নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে একের পর এক অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেন মার্জিয়ারা খাতুন (মার্জিয়া)। এই পরকিয়ার জের ধরে ভেঙে গেল মামুনুর রশীদ ও মার্জিয়ার ১২ বছরের সংসার।
২০১৩ সালে মার্জিয়ার সাথে পরিচয় হয় মামুনুর রশীদের। পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে বলে জানা যায়। প্রেমর সূত্রে মেয়ের মা, কৌশলে ছেলেকে নিজ বাড়িতে ডেকে নেন। ওইদিন সন্ধ্যায় মামুন, মার্জিয়ার বাড়িতে গেলে, মেয়ের মা তাদের এক ঘরে বসিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। এবং চিৎকার করে আশপাশের লোকজনকে ডেকে আনেন। এই পরিস্থিতিতে লোকলজ্জা ও মেয়ের মানসম্মানের কথা ভেবে ছেলের পরিবার রাজি না হওয়া সত্ত্বেও তিনি মার্জিয়াকে বিয়ে করেন।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে ২০১৩ সালের ৪ অক্টোবর মার্জিয়াকে বিয়ে করে মামুন। মার্জিয়া ও মামুনের বাড়ি নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলায়। সে-সময়ে মার্জিয়ার বয়স কম হওয়ার কারণে কাবিন করতে পারেনি স্বামি৷ পরবর্তীতে নিয়ম মেনে বিয়ে করে, তার কয়েকবছর পর কাবিন হয় তাদের।
মামুনুর রশীদ জানান, মার্জিয়াদের পরিবার ছিল অত্যন্ত দরিদ্র। মেয়ের বাবা দিনমজুরের কাজ করতেন। এ স্বত্তেও তিনি তাকে নিয়ে সংসার করার সিদ্ধান্ত নেন শুধু মাত্র মার্জিয়ার মান সম্মানের কথা ভেবে। এবং সমাজে যাতে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে সেজন্য মার্জিয়ার স্বামী তাদের জন্য একটি ভালো ঘর তৈরি করে দেন।
বিয়ের পর স্ত্রীর পড়াশোনার প্রতি স্বামীর মনোযোগ ছিল। স্বামীর চেষ্টায় মার্জিয়া এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। এরপর মার্জিয়া ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আবদার জানালে স্বামী তা মেনে নেন।
জানা গেছে, সে সময়ে নিজের দামি ল্যাপটপ বিক্রি করে ভর্তি ফি জুগিয়ে মার্জিয়াকে ঢাকার ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টে ভর্তি করান স্বামী মামুনুর রশীদ। শুধু তাই নয়, স্ত্রীর যাতে কষ্ট না হয় হোস্টেলে না রেখে ইউনিভার্সিটির কাছেই একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে দেন। এরপর স্বামী নাটোরে ফিরে বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় মনোযোগ দেন এবং ধীরে ধীরে তার পরিবারও এই বিয়ে মেনে নেয়।
আক্ষেপের সুরে মার্জিয়ার স্বামী জানান, শুরুর দিকে তাদের সুখের সংসার চলছিল। স্বামী প্রতি মাসের শেষ দিকে ঢাকায় এসে স্ত্রীর পড়াশোনা, হাত খরচ ও সংসার পরিচালনার জন্য ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আবার চলে যেতেন তার নিজ শহর নাটোরে।
গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে একের পর এক পরকীয়া
গ্রাম থেকে শহরে এসে বিলাসবহুল জীবন ও নামি-দামি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পেয়ে মার্জিয়া বদলে যেতে শুরু করেন বলে অভিযোগ স্বামীর। তার জীবনে জড়িয়ে পড়ে একের পর এক পরকীয়া সম্পর্ক।
স্বামী অভিযোগ করে বলেন, ‘ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি পড়ালেখার সুযোগে ওই ইউনিভার্সিটির রনি নামের এক শিক্ষকের সাথে তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যিনি বর্তমানে আমেরিকায় থাকেন। এবং রনি ছাড়াও আরও কয়েকজনের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ায় মার্জিয়া।’
২০১৯ সালের শেষ দিকে স্বামী প্রথমবার স্ত্রীর এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা জানতে পারেন। তা জানার পর, তিনি ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে মার্জিয়া মৌ স্বামীর পায়ে ধরে ক্ষমা চান এবং প্রতিজ্ঞা করেন যে তিনি আর এমন ভুল করবেন না। ভালোবাসার টানে এবং স্ত্রীকে একটি সুযোগ দিতে স্বামী তাকে ক্ষমা করে সংসারে ফিরিয়ে নেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আবার শুরু হয় মার্জিয়া মৌ-এর অবৈধ সম্পর্ক।
চলতি বছর স্বামী হঠাৎ ঢাকায় এসে জানতে পারেন তার আসল চরিত্রের কথা। একদিন স্বামী মার্জিয়াকে বাইকে করে অফিসের সামনে নামিয়ে দিতে গেলে তার স্ত্রীর সহকর্মীদের সাথে পরিচয় হয়। আলাপকালে সহকর্মীরা জানতে পারেন, এই মামুনুর রশীদই মার্জিয়া মৌ-এর স্বামী এবং তাদের বিবাহিত জীবন ১২ বছরের।
এসব কথা জেনে সহকর্মীরা অবাক হয়ে যান, কারণ অফিসে সবাই জানত মার্জিয়া মৌ অবিবাহিত এবং তার একজন প্রেমিক রয়েছে, যিনি আমেরিকা প্রবাসী। এরপরই স্বামী জেনে যান তার স্ত্রীর সব কুকীর্তির কথা।
গোপন সূত্রে মার্জিয়ার স্বামী জানতে পারেন, রনি ছাড়াও চাঁদপুরের আরেক ছেলের সাথেও মার্জিয়া মৌ-এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। স্বামীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই ছেলে মিরপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকে, যেখানে তার মা মাঝেমধ্যে ও ছোট ভাই থাকে এবং মার্জিয়া মৌ সেখানে গিয়ে সময় কাটাতেন ওই ছেলের সঙ্গে। স্বামী আরও অভিযোগ করেন, ‘মার্জিয়ার মা এসব অবৈধ সম্পর্কের বিষয়ে অবগত ছিলেন।’
মার্জিয়ার স্বামী তার এসব গোপন সম্পর্কের কথা ও অবিবাহিতর কথা জেনে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কিছু প্রকাশ না করে চুপ করে থাকেন। কিছুদিন পর মার্জিয়া তার স্বামীর কাছে আইফোন ১৭ প্রো দাবি করে। স্বামী যেহেতু সব জেনে গেছেন, তাই তিনি কৌশলে কিছুদিনের জন্য ফোন কিনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। মার্জিয়া তখনো বুঝতে পারেননি যে তার সব গোপন সম্পর্ক ফাঁস হয়ে গেছে।
এরপর স্বামী নাটোরে ফিরে গেলেন, সে ফিরে যাওয়ার কিছুদিন পর চলতি মাসের গত সপ্তাহে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি যান মার্জিয়া। স্ত্রী বাড়ি আসার কথা শুনে তাকে এগিয়ে নিতে আসে মামুনুর রশীদ। পথিমধ্যে স্বামী জোরপূর্বক তার স্ত্রীর ব্যবহৃত ফোনটি কেড়ে নেন। ফোন চেক করে তিনি ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে প্রায় ২০-২৫ জনের সঙ্গে মার্জিয়ার অবৈধ সম্পর্কের প্রমাণ পান।
এলাকা বাসীর সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সম্পর্ক ফাঁস হওয়ার পর মা ও মেয়ে মিলে বুদ্ধি করে দ্রুত স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে ঢাকায় পালিয়ে আসেন।
স্বামী অভিযোগ করে বলেন, ‘১২ বছরের বিবাহিত জীবনে মার্জিয়া বিভিন্ন কৌশলে তার কাছ থেকে প্রায় ১ থেকে দেড় কোটি টাকা নিয়েছেন।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘মার্জিয়া তার অবৈধ সম্পর্ককে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যে অফিসের কলিগ, ফ্ল্যাটের নিচের দোকানদার, সবজিওয়ালা, মুদি দোকানদার—সবার সাথেই তার সুসম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের জের ধরে সে কারও কাছ থেকে ৩০ হাজার, কারও থেকে ২০ হাজার, ৫০ হাজার এমনকি ১ লাখ টাকা পর্যন্তও নিয়েছে।’
এই বিষয়ে নাটোরের গুরুদাসপুরের কয়েকজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই মেয়ে (মার্জিয়া) ও তার মা অনেক লোভী। মেয়ের মা তার মেয়েদেরকে দিয়ে টাকার জন্য বিভিন্ন অনৈতিক কাজও করান। টাকার জন্য তার মা পারে না এমন কোনো কাজ নেই বলে জানায় এলাকাবাসী।
কেকে/এজে