হে আল্লাহ আমার কিছু হয়ে গেলে আমার মা হারা মেয়ে ৩টির কি হবে? আল্লাহ,,,,! আল্লাহ,,,? এমনই আহাজারি আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে এই বলে কাঁদছেন পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হতদরিদ্র এক অসহায় বাবা! তার চোখ অঝোরে ঝরছে অশ্রু। চোখের পানি গাল বেয়ে বালিশ ভিজে যাচ্ছে! এ সময় তার শিথানে পৈথানে বসে কাঁদছিল ৩ অবুঝ শিশু। এদৃশ্য দেখে চোখে পানি ধরে রাখা যাচ্ছিল না!
বলছিলাম, জামালপুর জেলার পাথালিয়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুস সাত্তারের ছেলে, অটোরিকশা চালক জাহিদের কথা।
তার পরিবারসূত্রে জানা যায়, জাহিদ পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। এছাড়া তার একটি গরু ও একটি বাছুর ছিল। গতমাসের ১০ তারিখে রিকশা চালিয়ে গিয়েছিল গরুর জন্য ঘাস কাটতে। ঘাসের বোঝা মাথায় নিয়ে ফেরার পথে খাদে পড়ে যায় সে। এতে করে তার ঘাড়ের ও মেরুদণ্ডের হাড়ে ভেঙ্গে একটা আরেকটাতে ঢুকে যায়। সারা দেহ অবশ হয়ে পড়ে। জামালপুর, ময়মনসিংহ ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে কোথাও চিকিৎসা পায়নি। অবশেষে জাহিদের অটোরিকশা, গরু ও বাছুরটি বিক্রি এবং পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ ঋণ করে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন করানো হয়। কিন্তু তার সারা শরীর এখনো অবশ। ঘাড় ছাড়া আর কোনো কিছু নাড়াচাড়া করতে পারে না। বিছানাতে প্রস্রাব পায়খানা করে। ডাক্তাররা তাকে একটি হাসপাতালে ভর্তি রেখে থেরাপি চালিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারছেন জাহিদ। কারণ এখন আর কিছু বেচার মতোও নেই। ঋণ করারও সুযোগ নেই।
এমতবস্থায়, চিকিৎসাসহ তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ। কারণ তার পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্যনক্ষম ছিলেন। অভাব অনটন সংসার থেকে ৩ বছর আগেই চলে গেছেন স্ত্রী। রেখে গেছে ৩টি অবুঝ শিশু। এতোদিন তাদেরকে আগলে রেখেছিল যে বাবা তিনিও আজ মৃত্যু পথযাত্রী। তার কিছু হলে মেয়ে ৩টির কি হবে? তাই ভেবে সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে শুয়ে অশ্রুপাত করছেন সেই অপারগ অসহায় বাবা।
এ ব্যাপারে জাহিদের এই চরম দুঃসময়ে যিনি পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, সেই ভগ্নিপতি আলমগীর বলেন, জাহিদের যা ছিল চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার সব বিক্রি করে দিতে হয়েছে। কিন্তু সে সুস্থ হয়নি। এখনো তার চিকিৎসা বাকি। কিন্তু সেই চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া আমাদের পক্ষে আর কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। তাই জাহিদের পরিবারটিকে বাঁচাতে মহান আল্লাহর সাহায্য চাইছি ও দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমরা। তার ছোট ছোট তিনটি বাচ্ছাই অসহায় বাবার মুখের দিকে তিকিয়ে দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে অঝোরে চোখের পানি।
কেকে/এআর