দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হতে চলেছে। দেশের অভ্যন্তরে তিন শ্রেণির ভোটারের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করা হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট।
এবারই প্রথম পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীরা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এটি খুবি আশার কথা। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। পরিবর্তিত বাংলাদেশে তাদের এসেছে ভোট দানের সুযোগ। তবে প্রবাসীদের ভোটগ্রহণে নানা জটিলতা রয়েছে, রয়েছে নানান চ্যালেঞ্জও। এত জটিলতা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন দীর্ঘ গবেষণার পর পোস্টাল ব্যালট এবং অনলাইন ভোটিং- এই দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে ভোটগ্রহণের কথা ভাবে। তবে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে আপাতত অনলাইন ভোটিং সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।
সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়- আগামী নির্বাচনে শুধু প্রবাসীদের জন্য আগাম ১০ লাখ পোস্টাল ব্যালট ছাপাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই পোস্টাল ব্যালটের পুরো কাজের তত্ত্বাবধানে ডাক বিভাগ থাকলেও নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসির এডহক কমিটির হাতে। যেখানে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা ও বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়- এই পুরো প্রক্রিয়াটি তারা কিভাবে সম্পন্ন করবে?
পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াটি মোটেই সহজ নয়। এটি যেমন জটিল তেমন ব্যয়সাপেক্ষও। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে- বাংলাদেশে প্রতিটি পোস্টাল ব্যালটের ভোটে ব্যয় হবে প্রায় ৭০০ টাকা। পোস্টাল ব্যালটে মাত্র ২.৭ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন করেন। নির্বাচন কমিশনের ধারণা ভোট অনেক আসবে তবে এখন পর্যন্ত তারা স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেনি। প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশন ১০ লাখ ব্যালট পেপার ছাপিয়ে রাখার কথা ভাবলেও পরবর্তীতে রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা অনুযায়ী ব্যালট পেপার ছাপানো হবে। দেশের বাইরে থেকে ভোটের রেজিস্ট্রেশনের জন্য নির্বাচন কমিশন একটি অ্যাপ ডেভেলপ করছেন। নভেম্বর মাসের ২য় বা ৩য় সপ্তহে অ্যাপটির কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন। এই অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য প্রত্যেক অঞ্চলে সাত থেকে দশ দিন সময় দেবে ইসি এবং বিশেষ বিবেচনায় এই সময়সীমা আরো বাড়তেও পারে। ইসির এই পোস্টাল ব্যালট নি:সন্দেহে ভালো পদক্ষেপ।
কিন্তু এত অল্প সময়ে অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরি, প্রচারণা, পোস্টাল ব্যালট আনা-নেওয়াসহ গণনা, ফল পর্যন্ত কাজটি বেশ চ্যালেঞ্জিং, কারিগরি দিকটি যেমন দেখতে হবে, তেমনি পাইলটিং করে চ্যালেঞ্জগুলোও চিহ্নিত করে দেখতে হবে। এসবের বাইরে প্রধান দুটি চ্যালেঞ্জ হলো ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা এবং আদালতের আদেশে প্রার্থী তালিকা পরিবর্তন হলে ভোট বাতিলের ঝুঁঁকি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী ডাকযোগে ব্যালট পৌঁছানোর ব্যর্থতার হার প্রায় ২৪ শতাংশ, যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালট আনা-নেওয়ায় প্রায় ৪৮-৫০ কোটি টাকা লাগবে। পোস্টাল ব্যালট আনা-নেওয়া করতে ১৬ দিন থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। যেখানে ভোটের তিন বা চার সপ্তাহ আগে প্রতীক বরাদ্দ হয়। অতদিন অপেক্ষা করলে ব্যালট পৌঁছাবে না প্রবাসীদের হাতে, তাই প্রতীকসম্বলিত ব্যালট আগে পৌঁছে যাবে, প্রবাসী ভোটাররা প্রার্থী দেখতে পাবেন অনলাইনে। তারপর তারা ব্যালটে থাকা পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে ভোট দেবেন। এটি একধরনের জটিলতা তৈরি করবে। আরো বেশি জটিল হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেলে। পছন্দের প্রার্থীকে বাছাই করতে হয়ে যেতে পারে ভুল, যা নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করবে।
এছাড়া আর্জাতিক মান অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটে নিবন্ধনের হার খুব কম। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ এটিকে ক্রিয়াশীল করতে পারে বলে প্রত্যাশা করা যায়। প্রবাসীদের ভোটকে স্বচ্ছ করতে ইসির মনিটরিং আরো শক্তিশালী করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে, দিতে হবে দায়িত্বশীলতার পরিচয়। তবেই পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের পুরো প্রক্রিয়াটি কার্যকর হবার মাধ্যমে প্রবাসীদের আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন হবে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এগোলে আশা করি ইসি সফল হবে।
কেকে/ এমএস