# আহত রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ
# বিজিবির সর্বোচ্চ সতর্কতা, সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আবারও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বান্দরবান ও কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকায় টানা কয়েক দিন ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করায় সীমান্তের গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
শনিবার (৫ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে মিয়ানমারের তুমব্রু-চাকমাপাড়া সীমান্তের ভেতরে দফায় দফায় গোলাগুলির শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। প্রথমে আতশবাজি মনে হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসিন্দারা বুঝতে পারেন এটি সশস্ত্র সংঘর্ষের শব্দ।
স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, ‘প্রথমে মনে করেছিলাম উৎসবের কিছু হচ্ছে, পরে টানা আধা ঘণ্টা গুলির শব্দ শুনে ভয় পেয়ে যাই।’
রামু ব্যাটালিয়ন (৩০ বিজিবি) সূত্র জানায়, সংঘর্ষটি সীমান্ত পিলার ৫৫ ও ৫৬ নম্বরের মধ্যবর্তী পোয়া মূরী ও বুচিতং এলাকায় ঘটেছে।
অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মিয়ানমারের ভেতরে গুলি বিনিময় চলছে। তবে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে কোনো প্রভাব পড়েনি। বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে মিয়ানমারের মংডু বাজার এলাকায় প্রবল গোলাগুলি শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আরও ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে উভয় পক্ষেরই হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে।
রোববার (৬ অক্টোবর) সকালে টেকনাফের হোয়াক্যং সীমান্ত দিয়ে একজন আহত রোহিঙ্গা চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে ঢুকেন। একইসঙ্গে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত দিয়েও আরও চারজন আহত রোহিঙ্গা ঢুকেছেন। তারা কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তা নিশ্চিত করা না গেলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত পিলার ৩৪-৫৭ পর্যন্ত অঞ্চলটি গরু ও মাদক পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই রুট নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে তিনটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র হচ্ছে। আরাকান আর্মির রাজনৈতিক শাখা ইউএলএ দাবি করেছে, আরসা ও আরএসও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় সীমান্ত এলাকায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।
রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তরে খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিনের সংঘর্ষে ত্রাণ পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু এলাকা অনাহারের মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মহলও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নতুন মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
বিজিবি সূত্র জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, থানচি, রুমা ও উখিয়া সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, সন্ত্রাস ও পাচার রোধে পুলিশ ও বিজিবির যৌথ টহল জোরদার করা হয়েছে।
সীমান্তবর্তী এলাকায় মাইন সচেতনতামূলক কার্যক্রম, জরুরি চিকিৎসা সহায়তা ও তথ্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
তুমব্রু, চাকমাপাড়া, ঘুমধুম ও হোয়াক্যং সীমান্ত এলাকার মানুষ বর্তমানে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। তারা রাতে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, সংঘর্ষ যদি আরও তীব্র হয়, তাহলে গুলি বা গোলাবর্ষণ বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি শুধু সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সংকটেও রূপ নিচ্ছে। এই সংঘর্ষ দীর্ঘায়িত হলে রোহিঙ্গা ইস্যু আরও জটিল হয়ে উঠবে।’
কেকে/এমএ