ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ এবং ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে বাংলাদেশের অখণ্ডতার ওপর চাপ তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছে ইন্তিফাদা বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ তোলেন বক্তারা।
এ সময় সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আহমদ রফিক বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির ধর্ষণ–অভিযোগকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা উস্কে দিয়ে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়, যদিও পরবর্তী চিকিৎসাগত যাচাইয়ে অভিযোগের ভিত্তি মেলেনি।
তিনি বলেন, ইউপিডিএফ বহু বছর ধরে অস্ত্রধারী সহিংসতা, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলায় জড়িত এবং সীমান্তপারের সহায়তায় শক্তিশালী হয়েছে। পার্বত্য সহিংসতায় ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের; সীমান্তবর্তী ত্রিপুরা ও মিজোরামে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ এবং ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রপাগাণ্ডা—সবই বাংলাদেশের অখণ্ডতার ওপর চাপ তৈরি করছে। এসবের সমন্বয়ে এক ধরনের “হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার” চালানো হচ্ছে, যেখানে প্রক্সি জঙ্গি তৎপরতা ও বিদেশ থেকে পরিচালিত তথ্যযুদ্ধ মিলিয়ে অস্থিতিশীলতা বাড়ানো হচ্ছে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ঔপনিবেশিক আমল থেকে আমদানি করা “আদিবাসী–সেটলার” ধারণাকে নতুন করে উসকে দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর নিজেদের “আদিবাসী” দাবি এবং বাঙালিদের “সেটলার” আখ্যা—দুটিই মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি বয়ান, যা বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই ভ্রান্ত বয়ান ব্যবহার করে একদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি বিদেশি সমর্থন ও বৈধতা আদায় করছে। অন্যদিকে বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার ও উপস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।
ইন্তিফাদা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের বামপন্থীদের একাংশও এ ধরনের ভ্রান্ত ন্যারেটিভ ও পাহাড়ে জঙ্গি তৎপরতাকে নীরবে বৈধতা দিয়ে বিভাজনকে ঘনীভূত করছে, যা কার্যত বিদেশি সম্প্রসারণবাদী এজেন্ডাকে শক্তিশালী করছে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহবুব উল আলম। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতা পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় জনগণের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র এবং দেশের অখণ্ডতার ওপর সরাসরি আঘাত। ইউপিডিএফ ও তাদের সহযোগীরা নারীর ইস্যুকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যা গভীরভাবে উদ্বেগজনক।
এ সময় পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেন বক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে ইন্তিফাদা বাংলাদেশ ছয়টি আহ্বান জানায়—
ইউপিডিএফসহ সব বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করে তাদের বিদেশি অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহের উৎসের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে হবে; সীমান্তপথে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি, সীমান্ত সুরক্ষা ও প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক পদক্ষেপ বাড়াতে হবে; বিদেশি প্রভাব ও বিভ্রান্তিকর তথ্যযুদ্ধ প্রতিহত করতে রাষ্ট্রকে আরও সক্ষম হতে হবে; ঔপনিবেশিক “আদিবাসী–সেটলার” বয়ান ভেঙে সঠিক ইতিহাসভিত্তিক জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে; গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেন নিজ দেশে নাগরিক, বিশেষ করে ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী নাগরিকদের হয়রানি ও টার্গেট করা অবিলম্বে বন্ধ করে জাতীয় নিরাপত্তা, বাহ্যিক হুমকি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা মোকাবিলায় মনোযোগী হয়; বাঙালি–পাহাড়ি জনগণের পারস্পরিক আস্থা, নিরাপত্তা ও সহাবস্থান জোরদারে রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
কেকে/ আরআই